বিএনপির গঠনতন্ত্র মানছেন না স্বয়ং খালেদা জিয়া

সব ক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র মানছে না বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—এমন নজিরও রয়েছে। আর এ ধরনের ঘটনাকে নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিএনপিতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা ঘটে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে।

গত ২ আগস্ট বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রথম ঘটনাটি ঘটায় দলটি। আর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি নিজে করবেন ঘোষণা দিয়ে এবং কমিটি অনুমোদন দিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটান খালেদা জিয়া। দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, এতটা প্রকাশ্যে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের ঘটনা দলের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নষ্ট করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে দলীয় চেয়ারপারসন জড়িত থাকায় এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তাঁরা।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে দলটির গঠনতন্ত্রে ৪৪টি সংশোধন পাস করা হয়। ওই সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনেও জমা দিয়েছে বিএনপি।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মূল রাজনৈতিক দল প্রবাসে শাখা, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, এরাও লেজুড়বৃত্তি করবে না। দলের গঠনতন্ত্রে এটা মেনে নিয়েই বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছে। এর ব্যত্যয় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র-বহির্ভূত কাজের জন্য বিগত নির্বাচন কমিশন বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছিল। এখনো এমন ঘটনা ঘটলে কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রবাসে বিএনপির শাখা ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সরাসরি বিএনপি দ্বারা পরিচালিত হবে না। এরা নিজ নিজ গঠনতন্ত্র দ্বারা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা সংগঠনগুলোর স্বাধীন সত্তা নষ্ট করেছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা সেই চিঠি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়। তবে রিজভী আহমেদ মনে করেন, প্রবাসী শাখা ভেঙে দেওয়া দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন নয়। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে সংগঠন করছেন। কিন্তু কমিটি থাকা না-থাকার বিষয়টি কেন্দ্র থেকে দেখতে পারে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ওই দেশে বিএনপির কার্যক্রম এখনো স্থগিত।
এ ছাড়া আগস্টের শুরুতে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি তাঁদের জানিয়ে দেন, ছাত্রদলের কমিটি তিনিই করবেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিতে তিনি যাঁদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে মনোনয়ন দেবেন, সবাইকে তা মেনে নিতে হবে। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন খালেদা জিয়া নিজে। অথচ বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়া ছাত্রদলের কেউ নন। ছাত্রদলও বিএনপির অঙ্গসংগঠন নয়।
অবশ্য ছাত্রদলের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, তাঁদের সংগঠনের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র।

No comments

Powered by Blogger.