কঠোর আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো হবে : খালেদা by শফিক সাফি ও শহীদুল হুদা অলক,

ত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন ঘটাতে ভবিষ্যতে আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই তাঁর দল সরকার হঠানোর আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে। আগামী দিনের কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে মফস্বল থেকে রোডমার্চ করে ঢাকায় যেতে হবে। এ জন্য আপনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।' গতকাল বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে রোডমার্চ শেষে আয়োজিত জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যিনি ব্যবস্থা নেবেন, যদি তাঁর কাছেই টাকা যায়, তাহলে তিনি আর কী ব্যবস্থা নেবেন? খালেদা জিয়া আরো বলেন, 'স্বাধীনতাবিরোধীর নামে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ নিজেই স্বাধীনতাবিরোধী।'
খালেদা জিয়া আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বিদায় দিয়ে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, একতরফাভাবে নিজেদের লোক দিয়ে ইসি গঠন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
সকাল ১১টার দিকে নওগাঁর এটিম হাইস্কুল মাঠে নির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলের দ্বিতীয় দফার রোডমার্চ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে শুরু করে বগুড়ায় গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে রাতযাপনের পর গতকাল সকাল ১১টার দিকে বগুড়া সার্কিট হাউসের সামনে থেকে শুরু হয়ে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে পেঁৗছায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জনসভা শেষে রাতেই রাজশাহী ও নাটোর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়াসহ অন্য নেতারা। দুদিনের এই রোডমার্চে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাগপা, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনপিপি, লেবার পার্টি, এনডিপি, ইসলামিক দল, মুসলিম লীগ, এলডিপি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চ জোটের নতুন কর্মসূচি। এই কর্মসূচি অত্যন্ত সফলভাবে চলছে। ঢাকা-সিলেট প্রথম রোডমার্চ দেখেই সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে, জনগণ জেগে উঠেছে। তাই ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রোডমার্চে সরকার পদে পদে বাধা দিয়েছে। বিএনপির সরাসরি সম্প্রচারিত ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবুও জনতার ঢল রুদ্ধ করা যায়নি। জনগণ এ সরকারকে আর চায় না। তিন বছরে তারা একটি ওয়াদাও পূরণ করতে পারেনি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মানুষকে বোকা বানিয়ে তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কোনো ওয়াদা পূরণ না করে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ কারণে সরকারের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। তাদের ক্ষমতায় থাকারও কোনো অধিকার নেই।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও সাকা চৌধুরীকে আটক করেছে। কিন্ত তাঁরা স্বাধীনতাবিরোধী নন। যারা দেশবিরোধী বিভিন্ন চুক্তি করছে, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী। তিনি অবিলম্বে এসব নেতার মুক্তি দাবি করেন। ফজলুল হক আমিনীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার পাঁচ মাস যাবৎ তাঁকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে পরিণতি শুভ হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশি প্রভু ও মঈন-ফখরুদ্দীনের ওপর ভর করে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসে সরকার তাদের কাছে দেওয়া ওয়াদাই পূরণ করছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত আজ খোলা। ট্রানজিটের নামে করিডর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল ট্রানজিট পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে। আসলে ভারতকে স্থায়ী ট্রানজিট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা দেশের মধ্য দিয়ে মালামাল নিয়ে যাবে অথচ ট্যাঙ্ দেবে না। কিন্তু জনগণ দেশের স্বার্থ দেখবে। ট্রানজিটের নামে করিডর বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তিনি বলেন, সরকার বলেছিল ট্রানজিট দিলে দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু এখন কোনো ট্যাঙ্ না পেয়ে দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, গঙ্গা চুক্তি হলেও কোনো পানি নেই। যেটুকু পানি দেওয়ার কথা ছিল তা-ও দেয় না ভারত। তিস্তা চুক্তিও করতে পারেনি সরকার। বাংলাদেশের উজানে ৫৭টি নদী থেকে একতরফাভাবে ভারত বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে। তিনি বলেন, 'আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চাই। কোনো বৈরিতা চাই না। কিন্তু সরকার ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী নানা চুক্তি করে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনছে।'
ভারত বাংলাদেশকে তাদের বাজারে পরিণত করেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশিরা এ দেশে চাকরি করছে। দেশের মানুষ চাকরি পায় না। বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে গ্যাস-বিদ্যুৎ দিলেও দেশের হাজার হাজার ফ্ল্যাট মালিক গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে সেগুলো ভাড়া দিতে পারছেন না। এতে তাঁরা ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছেন না। এ দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এমনকি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যদি অন্য দেশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকল কোথায়? আমরা পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে দেশকে স্বাধীন করেছি ভারতের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটাই চায়। যে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছে তাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ করে দেশকে শৃঙ্খলমুক্ত করব।'
বিএনপি নেত্রী বলেন, 'আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর ছিল দক্ষ। সীমান্ত ছিল নিরাপদ। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিতভাবে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এটা ছিল দেশের ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। বিডিআর হত্যকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হয়নি। প্রকৃত খুনিদের অনেককে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে। বিডিআরের পোশাক ও নাম পরিবর্তন করা হলেও সীমান্ত আজ অরক্ষিত। যুবসমাজকে ধ্বংস করতে অবাধে আসছে ফেনসিডিল ও মাদকদ্রব্য।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকতে আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু পুরো রায় এখনো বেরই হয়নি। সংক্ষিপ্ত রায় অনুযায়ী আরো দুবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলা হলেও সরকার একতরফাভাবে গায়ের জোরে সংবিধান থেকে এ পদ্ধতি তুলে ফেলেছে।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল আওয়ামী লীগের দাবি। ১৯৯৬ সালে তারা এই দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু এখন তারা সেই ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে। এটা মানুষ ধরে ফেলেছে। তারা বুঝতে পেরেছে, তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।'
প্রধানমন্ত্রীর বারবার বিদেশ সফরের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'তিনি ঘন ঘন বিদেশ সফর করছেন। যে দেশের মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না, ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খায়, অভাবের তাড়নায় কোলের শিশুকে বিক্রি করে দেয়; সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কী করে এতবার বিদেশ সফর করেন।' তিনি আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর লোকদের দেশপ্রেম বলে কিছু নেই। জনগণের প্রতি তাঁদের প্রেম নেই, দায়িত্বও নেই। এমনকি তাঁদের পরিবারের অনেক সদস্য বিয়েও করেছেন বিদেশে।'
শেয়ারবাজারে লুটপাটের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেযারবাজারের বিপর্যয়কর অবস্থা দূর করা সম্ভব নয়। এমনকি তিনি শেয়ারবাজার ঠিকমতো বোঝেন না বলে মন্তব্য করেছেন। যিনি শেয়ারবাজার সম্পর্কে বোঝেন না, তিনি কেন অর্থমন্ত্রীর পদে বসে আছেন? ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে এ সরকার। প্রায় সোয়া কোটি মানুষ আজ নিঃস্ব।'
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এবং চার দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলের রোডমার্চ ও জনসভাকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সাজানো হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে নির্মাণ করা হয় প্রায় ১০০ তোরণ। শহরের মোড়ে মোড়ে টানানো হয় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত বড় বড় ব্যানার-পোস্টার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালেদা জিয়া নগরীর রেলগেট, বহরমপুর বাইপাস ও কাশিয়াডাঙ্গা হয়ে গোদাগাড়ী দিয়ে রোডমার্চ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁৗছেন।
বগুড়া থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোডমার্চ আসার পথে বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান। বিএনপির চেয়ারপারসনও হাত নেড়ে তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। রোডমার্চে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ সমমনা দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামুসজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা রোডমার্চে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ছিলেন।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, খালেদা জিয়া নওগাঁর এটিম মাঠের জনসভায় বলেছেন, ভবিষ্যতে যে কর্মসূচি দিব তা পালন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ জেলা বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জোহা খান। বক্তব্য দেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন, স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, গ্রেপ্তারকৃত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পত্নী ফারাহ কাদের চৌধুরী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, নওগাঁ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক সালেকুর রহমানসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
রাজশাহী অফিস জানায়, গতকাল সকাল থেকেই রাজশাহীর মোহনপুর থেকে গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে বিএনপি নেতা-কর্মীর অবস্থানকে ছাপিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রাধান্যই ছিল লক্ষণীয়। খালেদা জিয়া রাজশাহী না পেঁৗছানো পর্যন্ত চলে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের উল্লাস। সমাবেশে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তাঁরা বলেন, নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদের কিছু হলে দেশে ১৫ আগস্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।
জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ কারাবন্দি নেতাদের বড় বড় ছবি নিয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মোহনপুর উপজেলার কামারপাড়া থেকে রেলগেট এবং নগরীর ১০টি পয়েন্টসহ রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের রাজাবাড়ী, গোদাগাড়ী ও বাসুদেবপুরের ছয়টি পয়েন্টে সড়কের কাছে ও নগরীর রেলগেটসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে। জামায়াত-শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরীর নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা একাধিক মাইক লাগিয়ে দলীয় ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য দেন। অধিকাংশ নেতা-কর্মীর মাথায় ছিল আফগান মুজাহিদদের মতো সবুজ কাপড়ের পাগড়ি।
গোদাগাড়ীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহা. ওবায়দুল্ল্লাহর উসকানিমূলক বক্তব্যের সময় উপস্থিত লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
রোডমার্চ উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একটি অগ্রবর্তী দল নিয়ে নওগাঁ থেকে রাজশাহীর মোহনপুরে পেঁৗছান। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও এলডিপি নেতা কর্নেল অলি বক্তব্য দেন।
এদিকে 'বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ' হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত সামপ্রতিক সময়ে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও রোডমার্চ কর্মসূচি ও খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে হঠাৎ সরব হয়ে ওঠে। জামায়াত-শিরিরকে সামপ্রতিক সময়ে তেমনটা রাস্তায় দেখা না গেলেও খালেদা জিয়ার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কর্মসূচি নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তারা নানামুখী তৎপরতা চালিয়েছে। পুলিশি প্রতিবন্ধকতায় ঘরের মধ্যে কর্মকাণ্ড চালানো জামায়াত-শিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বেশ কিছু মিছিল সমাবেশ করেছে যৌথ কর্মসূচিকে পুঁজি করে।
জনসভায় বিএনপি ও জোটের অন্যান্য নেতার মধ্যে বক্তব্য দেন_বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজিপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতুল্লাহ বুলু, আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দা আফিয়া আশরাফী পাপিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশরাফুল আলম রশিদ প্রমুখ।
খালেদার গাড়ির চাকায় পিষ্ট মিনুর পা

No comments

Powered by Blogger.