বাস নেই তবু মালিক সমিতির সভাপতি-বরিশালে আরেক বাসস্ট্যান্ড দখল করে লীগ নেতাদের নতুন কমিটি

রিশাল শহরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পর এবার চরকাউয়া বাসমালিক সমিতির (বাসস্ট্যান্ড) কার্যালয় দখল হয়েছে। প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতায় গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে কীর্তনখোলা নদীর ওপরের ওই কার্যালয় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা দখল করেন। রাতেই কার্যালয়ে বসে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাস না থাকায় সমিতির সদস্য নন এমন ব্যক্তিদের শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নবগঠিত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে একইভাবে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখলের পর কমিটি গঠন করা হয়েছিল।


জানা গেছে, বরিশাল শহরের কীর্তনখোলা নদীর ওপরেই সদর উপজেলা চরকাউয়া ইউনিয়ন। ভোলা, বাকেরগঞ্জ রুটের যাত্রীবাহী বাস বরিশালের চরকাউয়া থেকে ছেড়ে যায়। বর্তমানে ওই রুটে অন্তত ৫২টি বাস চলাচল করে। বাসগুলো থেকে প্রতিদিন বাসমালিক সমিতির অনুকূলে অর্ধলাখ টাকা জমা পড়ে। কমিটির লোকজন সেই টাকা এত দিন নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন বলে জানা গেছে। তবে ওই রুটে নতুন বাস চলাচলের জন্য সমিতির কাছ থেকে কথিত রুট পারমিট নেওয়ার সময় মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুয়াল হোসেন অরুণের নেতৃত্বে নিজ দলীয় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে চরকাউয়া বাসস্ট্যান্ডে যায়। দখলের খবরে আগেভাগেই বিএনপিপন্থী বাসমালিক নেতারা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে কার্যালয় দখল করেন। তখন কিছু সময়ের জন্য আশপাশের খাবারের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে কার্যালয় দখলের পর আওয়ামী ক্যাডারদের উপস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে বাসমালিক সমিতির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন সভাপতি, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আবুয়াল হোসেন অরুণকে সহসভাপতি এবং নজরুল ইসলাম চুনু্নকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে ১৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমিতির গঠনতন্ত্র হিসেবে বাসমালিকরাই সমিতির সদস্য হতে পারেন। কিন্তু নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সহসভাপতিসহ অনেক সদস্যেরই বাস নেই।
তবে বাসমালিক সমিতির কার্যালয় দখলের কথা অস্বীকার করে নবগঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণর্ এবং অবৈধ ছিল। তাই সমিতির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সোমবার রাতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণের সমর্থন রয়েছে_এমন তথ্য দিয়ে তিনি জানান, এ ব্যাপারে দুই পক্ষকে নিয়ে সমস্যা নিরসনের উদ্যোগও তিনি নিয়েছেন।
নবগঠিত কমিটির সভাপতির বাস না থাকার বিষয়টি তিনি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। তিনি পুরনো কমিটির সমালোচনা করে বলেন, 'বন্দর থানার পুলিশ সদস্যদের কর্তব্য পালনে বাধাদানের পাশাপাশি তাঁদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে সমিতির লোকজন পালাতক ছিল। ফলে সমিতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। মূলত সমিতি গতিশীল করতেই বাসমালিকদের অনুরোধে আমাদের কয়েকজনকে কমিটিতে থাকতে হচ্ছে।'
দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি আবুয়াল হোসেন অরুণ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চরকাউয়া-নেহালগঞ্জ রুটে একটি বাস চলাচলের অনুমতির জন্য প্রায় দুই মাস ধরে কমিটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। সমিতির নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি রুট পারমিট পাইনি। তখন থেকেই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সদস্যদের মতামত নিয়েই সোমবার রাতে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।'
এদিকে বাসমালিক সমিতির কার্যালয় দখলের ব্যাপারে পুরনো কমিটি বরিশাল প্রেসক্লাবে গতকাল বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক লিটন বাশার বিষয়টি লিখিতভাবে সব সদস্যকে অবগত করেন। সে অনুযায়ী সংবাদকর্মীরা ক্লাবে গিয়ে জানতে পারেন, হঠাৎ করেই সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। তবে কী কারণে স্থগিত করা হয়েছে, সে ব্যাপারে পুরনো কমিটির পক্ষে থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আফতাব হোসেনের দখলে ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাদী হয়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা করার পর আফতাব তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আত্মগোপন করেন। এই ফাঁকে সিটি মেয়রের অনুসারী কামাল হোসেন ওরফে ফাঁসি কামাল, কাউন্সিলর ফরিদ হোসেন টার্মিনাল দখলে নেন।

No comments

Powered by Blogger.