রাদ্দ স্পেকট্রাম থেকে বাড়তি ৪৩১ কোটি টাকা দাবি-এ সিদ্ধান্ত বড় ধরনের আঘাত : গ্রামীণফোন এই দাবি আইনসম্মত : বিটিআরসি

স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি অর্থ আদায় নিয়ে নতুন করে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তিন বছর আগে ২০০৮ সালে ১৮ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া স্পেকট্রামের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের কাছে অন্যায্যভাবে বাড়তি ৪৩১ কোটি টাকা দাবি করেছে_এমন অভিযোগ বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, এই দাবি 'সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর রেগুলেটর অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইন্স-২০১১' অনুসারে আইনসম্মতভাবেই করা হয়েছে। এই গাইডলাইন সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়েছে এবং তা অনুসরণে বিটিআরসি বাধ্য।


অন্যদিকে গ্রামীণফোনের অভিযোগ, বিষয়টি তাদের কাছে বিস্ময়ের এবং বড় ধরনের আঘাত। এতে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।বিটআরসি গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেলকে তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে স্পেকট্রাম চার্জসহ অন্যান্য ফির প্রথম কিস্তির ৪৯ শতাংশ অর্থ জমা দিতে গত সোমবার চিঠি দেয়। চিঠিতে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংককে তাদের বরাদ্দ পাওয়া স্পেকট্রামের জন্য মার্কেট কম্পিটিশন ফ্যাক্টর (এমসিএফ) অনুযায়ী বাড়তি ৪৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নীতিমালায় গ্রামীণফোনের ১ দশমিক ৪৮, বাংলালিংকের ১ দশমিক শূন্য ৬, রবির দশমিক ৯৯ ও সিটিসেলের দশমিক ৩৩ শতাংশ এমসিএফ ধার্য করা হয়েছে। সে অনুসারে বিটিআরসির দাবি আইনসঙ্গত হলে গ্রামীণফোনের আগের ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি ৩৮৪ কোটি টাকা এবং বাংলালিংককে ২ দশমিক ৬ মেগাহার্টজের জন্য বাড়তি ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। রবিরও ২০০৮ সালে বরাদ্দ পাওয়া ২ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম রয়েছে। কিন্তু তাদের এমসিএফ কম হওয়ায় বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না।
এ ছাড়া আগামী ১৫ বছরের জন্য নতুন করে স্পেকট্রাম বরাদ্দ নিতে গ্রামীণফোনকে ১৪ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য তিন হাজার ২৪১ কোটি দুই লাখ, বাংলালিংককে ১২ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য এক হাজার ৯৭১ কোটি ৬০ লাখ, রবিকে ১২ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য এক হাজার ৯০০ কোটি ৮০ লাখ ও সিটিসেলকে তাদের ব্যবহারযোগ্য ৮০০ ব্যান্ডের ১০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা দিতে হবে।
গ্রামীণফোন বিটিআরসির ওই চিঠি পাওয়ার পর সোমবার কালের কণ্ঠকে জানায়, ২০০৮ সালে তারা যখন ১৮০০ ব্যান্ডের ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ বরাদ্দ নেয়, তখন লিখিতভাবে তাদের এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, এর জন্য ভবিষ্যতে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বাড়তি ফি দিতে হবে না। কিন্তু বিটিআরসির চিঠিতে ওই স্পেকট্রামের জন্য এমসিএফ অনুসারে অতিরিক্ত প্রায় ৩৮৪ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, লাইসেন্স নবায়নের সিদ্ধান্তের আগেই ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাট সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার আগেই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। গ্রামীণফোন এ বিষয়ে বিটিআরসির ব্যাখ্যা চায়।
বিটিআরসির মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স) এ কে এম শহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে গতকাল বলেন, 'সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর রেগুলেটর অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস-২০১১'-এর ৯ অনুচ্ছেদে আগের ওই স্পেকট্রামের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
সর্বশেষ এই দাবি ছাড়াও সম্প্রতি বিটিআরসি গত ১৫ বছরের সুদে-আসলে প্রাপ্য হিসেবে গ্রামীণফোনকে তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা পরিশোধের নোটিশ দেয়। গ্রামীণফোন ওই নোটিশ অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.