প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম যাচ্ছেন, সেজেছে তিনবিঘা করিডর by হায়দার আলী বাবু,

ত বছরের ১০ মার্চ। দিনটি দেশের সবচেয়ে আলোচিত ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষের জন্য ছিল খুব আনন্দের। এদিন সেখানকার স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ দিনমজুর অনেকেই সরাসরি কথা বলেছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তারা তুলে ধরেছিল তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারত নিয়ন্ত্রিত তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখা ও দহগ্রাম হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু রাখা। শেখ হাসিনা ওই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে দহগ্রামে দিনব্যাপী আয়োজিত চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।


কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে, চালু হবে দহগ্রাম ১০ শয্যা হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম, আসবে বিদ্যুৎ।
দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি বাস্তবায়ন করে ওই প্রতিশ্রুতির বছর দেড়েক পর আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে আসছেন এই ছিটমহলে। ফলে দেশের মূল ভূখণ্ডের অনেকটা বাইরে থাকা প্রায় ১৫ হাজার অধিবাসীর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নতুনরূপে সেজেছে। তিনবিঘা করিডর, সেখানকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ঝকঝক করছে। রাস্তার দুই পাশে লাগানো হয়েছে নানা রঙের পতাকা, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ফেস্টুন, নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটিই শেখ হাসিনার প্রথম সফর। এর আগে ১৯৯৬ সালের দিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তিনি ছিটমহলটিতে এসেছিলেন। তবে ভারত-বাংলাদেশের একটি চুক্তির পর ১৯৯২ সালের ২৬ জুন দিনে এক ঘণ্টা পরপর তিনবিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর দেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পর ওই বছরই খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম এখানে আসেন। এরও আগে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অবরুদ্ধ ছিটমহলটি পরিদর্শন করেন। ১৯৭৪-এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর এরশাদের সফরে নতুন করে ওই ছিটমহলটি আলোচনায় আসে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আজ দুপুরে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রী আসবেন দহগ্রামে। এখানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ১০ শয্যাবিশিষ্ট দহগ্রাম হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম ও নবনির্মিত দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর এখানকার লোকজনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় শেষে তিনি সড়কপথে তিনবিঘা করিডর পরিদর্শন শেষে পাটগ্রামে আসবেন। বিকেলে পাটগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও থাকার কথা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দহগ্রাম হাসপাতালকে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে। এত দিন যেখানে একজন চিকিৎসকের দেখা পাওয়াই দায় ছিল, সেখানে এখন একাধিক চিকিৎসক। আছেন নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী-ওয়ার্ডবয়। ভর্তি আছে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ। বহির্বিভাগে আসা রোগীরা ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। দেওয়া হয়েছে নতুন অ্যাম্বুলেন্স।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও দহগ্রাম মুক্তি আন্দোলনের সাবেক নেতা, স্কুলশিক্ষক রেজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের সবচেয়ে বড় দাবি তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর থেকেই এখানকার মানুষ অপেক্ষায় আছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য। তাই তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পুরো ছিটমহলের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে তিনবিঘা করিডর এলাকাও সেজেছে বর্ণিল সাজে। সেখানে নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সীমিত করা হয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। অন্যদিকে এ করিডরের ভারতীয় অংশে সে দেশের পক্ষেও বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও পুরো প্রস্তুতি নিয়েছেন। করিডরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমসহ দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে উভয় দেশের পক্ষে এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা পালন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা আসনের সংসদ সদ্য মোতাহার হোসেন বলেন, 'বিষয়টি সর্বাধিক গোপনীয়, তাই কিছু বলা যাবে না। তবে ভারতের উচ্চ পর্যায়ের কেউ উপস্থিত থাকবেন করিডরে।'
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন মহাজোটের নেতা-কর্মীরা। প্রশাসনের পাশাপাশি তাঁরাও বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। লালমনিরহাটের অন্যান্য উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে। বিকেল ৩টায় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন কালের কণ্ঠ জানান, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য এ এলাকার নারী-পুরুষ কেউ বাড়িতে থাকবে না। কমপক্ষে দুই লাখেরও বেশি মানুষ উপস্থিত থাকবে জনসভায়।

No comments

Powered by Blogger.