ঘরে ফিরলেন ৪৭৭ ফিলিস্তিনি বন্দি

সরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে (২৫) হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস।গতকালমঙ্গলবারতাকেইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত পাঁচ বছর শালিত হামাসের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ইসরায়েলি সেনা জীবিত অবস্থায় ফিলিস্তিন থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারলেন। মুক্ত হয়ে শালিত আশা প্রকাশ করেছেন, এই বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া উভয় দেশের মধ্যে শান্তি আনয়নে সহায়তা করবে। খবর এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের।


মঙ্গলবার সকালে গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্তে শালিতকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে প্রথম দফায় ৪৭৭ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়ে বাসযোগে একই রুটে ফিলিস্তিনে পাঠায় ইসরায়েল। মুক্তির পর পরই শালিত ইসরায়েলে চলে যান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শালিত ইসরায়েলে পেঁৗছেছেন। তিনি সুস্থ ও সবল আছেন এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। মিসরে তাকে ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বরণ করে নেন। সীমান্তের কাছের একটি সেনাঘাঁটিতে নিয়ে প্রাথমিক মেডিকেল চেকআপ শেষে শালিতকে দক্ষিণ ইসরায়েলের তেল নফ বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মা-বাবা-ভাইবোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন তিনি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুই তাকে তার পরিবারের কাছে উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের সন্তানকে ঘরে ফিরিয়ে এনেছি।' এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মার্ক রেগেভ জানান, তার সরকার ফিলিস্তিনি বন্দিদের কাছে রেড ক্রস কর্মীদের নিয়মিত যাতায়াতের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এমন কিছু লোককে আজ আমরা মুক্তি দিচ্ছি। যারা রেস্টুরেন্টে, গাড়িতে বোমা মেরে বহু নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধ নিরসনে গঠিত জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সমন্বয়ে গঠিত জোট (কোয়ার্টেট) আগামী সপ্তাহে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন পরিদর্শনে যাচ্ছে বলেও জানান মার্ক রেগেভ। তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছি। মুক্তির পর মিসরীয় এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শালিত বলেন, 'আমি আশা করি এ চুক্তি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষকেই শান্তি অর্জনে সহায়তা করবে।' তিনি তার মুক্তির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ফিলিস্তিনের বাকি বন্দিদেরও মুক্তি কামনা করেন। মিসরের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে চুক্তি করে ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী শালিতকে ফেরত পেতে ইসরায়েল এক হাজার ২৭ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে। গতকাল মুক্তি পাওয়া বন্দিদের বরণ করতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। গাজা সংলগ্ন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ লোক জড়ো হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বন্দিদের বরণ করে নেয়। মুক্তিপ্রাপ্তরা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেখানে। ফিলিস্তিনে প্রবেশের পর মুক্তিপ্রাপ্তদের সরাসরি রামাল্লায় প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাজার হাজার লোকের সামনে বক্তব্য রাখেন মাহমুদ আব্বাস। ওই বন্দিদের ত্যাগ ও প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০০৬ সালের ২৫ জুন গাজা উপত্যকা থেকে শালিতকে আটক করে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক সংগঠন হামাস। তখন ১৯ বছর বয়সী শালিত ছিলেন গাজা সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত এক করপোরাল। এর তিন দিন পর তাকে উদ্ধার করতে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালায়। পাঁচ মাস ধরে চলা ওই হামলায় মারা যায় কমপক্ষে ৪০০ ফিলিস্তিনি।
সম্প্রতি মিসরের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে শালিতকে মুক্তি দিতে রাজি হয় হামাস। কোনো একক ব্যক্তির মুক্তির জন্য এতসংখ্যক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাও দুই দেশের মধ্যে এই প্রথম।
 

No comments

Powered by Blogger.