নারী নেতৃত্বের উদাহরণ দিতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলেন হিলারি

লিবিয়ার সুশীল ও তরুণসমাজের কাছে নারী নেতৃত্বের উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। গত মঙ্গলবার সংক্ষিপ্ত সফরে লিবিয়ায় গিয়ে ত্রিপোলি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সুশীল ও তরুণসমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একজন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, 'বিপ্লবের পুরোটা সময় লিবিয়ার নারীরা কঠিন সময় পার করেছেন।


তাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, স্বামী, সন্তান, ভাইকে হারিয়েছেন। লিবিয়ার নারীদের আপনি কী বার্তা দিতে চান? এ দেশেও (লিবিয়া) নারীরা প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন বলে আপনি আশা করেন?'এর প্রতিক্রিয়ায় হিলারি বলেন, লিবিয়ার নারীদেরও পুরুষের মতো অধিকার আছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আশা করেন, নতুন গণতান্ত্রিক এ দেশে নারীদের অধিকার নিশ্চিত হবে। বিপ্লবের সময় নারীরা নির্যাতিত হয়েছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, এখনো নির্যাতিত হওয়ার খবর আসছে সিরতি থেকে।
এরপর হিলারি বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার ৯০টিরও বেশি দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি সব ধরনের সরকারের দেশেই গেছি। আমি দেখেছি, নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমন আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন, এই তো সেদিন আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলাম। তিনি একজন নারী। সম্প্রতি আমি ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনিও নারী। আমি মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনিও নারী।'
হিলারি আরো বলেন, 'আমি যে তিনটি দেশের নাম বলেছি তাদের মতো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক অনেক দেশ নারীর অংশগ্রহণের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ, শিক্ষকতা এবং সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ দিচ্ছে।'
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের মুখে বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বের প্রশংসা বা উদাহরণ এবারই প্রথম নয়। ২০০৯ সালের জুন মাসে মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলেন। এ ছাড়া টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বসেরা ১০ নারী নেতৃত্বের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থান পেয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। গত বছরের ৩ আগস্ট জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ উপনেতা ছাড়াও কৃষি, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, মহিলা ও শিশুবিষয়ক, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা। এ ছাড়া বিরোধী দলের নেতাও একজন নারী। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। এর ছোঁয়া গ্রামীণ এলাকাতেও পড়ছে।'
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো জানায়, নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের আস্থার প্রমাণ মিলেছে বিশ্বব্যাপী নারীদের অগ্রগতি তদারককারী জাতিসংঘের নতুন সংস্থা ইউএন উইম্যানের নির্বাচনে। গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ ইউএন উইম্যানের সদস্য ৫৪টি রাষ্ট্রের সবার ভোট পেয়ে সংস্থার নির্র্বাহী বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.