তার পরও একটু অতৃপ্তি! by তারেক মাহমুদ

সাকিব আল হাসানের হাতে দুটো ট্রফি। একটি শেষ ওয়ানডের ম্যান অব দ্য ম্যাচের, আরেকটি ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার। ট্রফি দুটোর মতোই চকচক করছিল তাঁর মুখ। অথচ ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি ধরার আগে কিনা বললেন, ‘এটা বিশেষ কিছু নয়।’ চট্টগ্রাম সব সময়ই পয়মন্ত ভেন্যু বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বকাপের পর কাল আবারও প্রমাণিত হলো, এই মাঠ ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠার অনুপ্রেরণা দেয়। বিশ্বকাপ অধিনায়ক সাকিবের জন্য কালকের জয়টা হওয়ার কথা বাড়তি খুশির উপলক্ষ।

বিশ্বকাপে ৫৮-এর ঝড় যে তখনকার অধিনায়কের ওপর দিয়েই গেছে বেশি! কিন্তু কাল ম্যাচ শেষে সাকিব বললেন, ওই শোক এখন আর মনে নেই, ‘দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি, সে কারণেই খুশি। হতাশা তখন ছিল, এখন আর নেই। মানুষ তো সবকিছুই ভুলে যায়। কাছের কেউ মারা গেলে প্রথমে কষ্ট লাগে। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। সবই সময়ের ব্যাপার।’
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা আগেও বলেছেন, ৫৮-এর দুর্ঘটনা তাঁরা ভুলে যেতে চান। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও অনুযোগের সুরে বললেন, ‘ওটা আপনারাই মনে করিয়ে দেন বারবার। টি-টোয়েন্টি জেতার পরও অনেকে ৫৮-এর কথা তুলেছে। জেতার কথা কারও মনে থাকে না। এটা ঠিক, ওটা অনেক বড় একটা হার ছিল। তবে আমার মনে হয় আজকের (গতকাল) পর আর কেউ এসব বলবে না, বললেও আগে বলে নেবে আমরাও ওদের ৬১ রানে অলআউট করেছি।’
মুশফিক কথাটা বললেন বটে, নইলে ৫৮-এর ক্ষত যে এখনো তাঁদের মনেও দাগ কেটে আছে, অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সেটি কি স্বীকার করে নেননি! কাল ৪৮ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ উইকেট পড়ার পর তো তাঁরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ক্যারিবিয়ানদের ৫৮-এর কমে অলআউট করে দিতে! ‘ওদের ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম, ৫৭-তে অলআউট করার চেষ্টা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা না হলেও সব মিলিয়ে ভালো একটা ম্যাচ হয়েছে’—মনে একটু অতৃপ্তি রেখে কথাটা বলেছেন মুশফিকই।
৫৮-এর মধ্যে অলআউট করতে না পারার কারণ সাকিবের একটি ওয়াইড বল, যেটা থেকে তিনটি বাই রানও এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে ওই বলটার কথা বলতে গিয়ে সাকিব মজাই করলেন একটু, ‘চিন্তা করলাম, ৫৮ এর নিচে অলআউট হলে তো ওদের বেশি কষ্ট লাগবে। একটা ওয়াইড দিয়ে দিই...।’
আসল কারণটা বললেন এর পর, ‘মনে হচ্ছিল, এক-দুই ওভারের মধ্যেই উইকেট পেয়ে যাব। উইকেটের জন্য বল করায় কিছু রান হয়ে গেছে। নইলে ওদের আরও কম রানে অলআউট করা সম্ভব ছিল।’
৫৮-এর জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১-এর লজ্জায় ফেলায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বড় ভূমিকা দেখছেন টস জয়ের। সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার আগেই বলছিলেন, ‘টস জেতায় খুব ভালো হয়েছে। কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে আমাদের। আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় ১৭-১৮ ঘণ্টা কাভারের নিচে ছিল উইকেট, তাতে কিছু ময়েশ্চারও জমেছিল।’
উইকেটের এই সুবিধা পাচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররাও। ৬২ রানের জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতেও তাই বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে হয়েছে ২০ ওভার, হারাতে হয়েছে ২ উইকেট।
উইকেটের সাহায্য ছিল, সেটা কাজে লাগানোর কৃতিত্ব বোলারদের। তবে বিশ্বকাপের স্মৃতির কারণে চট্টগ্রামের মাঠ এই ম্যাচে বাড়তি আত্মবিশ্বাসও জুগিয়েছে মুশফিকদের, ‘এ মাঠে খেললে মনের মধ্যে সাহস থাকে হয়তো জিতব। আশা থাকে বেশি। কেন জানি মনে হয় আমরাই জিতব।’
কাল চারটি পরিবর্তন ছিল বাংলাদেশ দলে। আগের ম্যাচ খেলা আশরাফুল, রুবেল, অলক ও রাজ্জাকের জায়গায় খেলেছেন শাহরিয়ার, নাজমুল, শুভাগত ও সোহ্রাওয়ার্দী। পরিবর্তনের ক্রিকেটীয় কারণের সঙ্গে আছে টেস্টের আগে অনেককে বিশ্রাম দেওয়ার উদ্দেশ্যও। ‘আমাদের আজ (গতকাল) হারানোর কিছু ছিল না। তা ছাড়া সামনে অনেক খেলা আছে। যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না, তাদের বিশ্রাম দিয়ে যারা বেঞ্চে আছে টেস্টের আগে তাদের সামর্থ্যটা কী রকম, সেটাও দেখার বিষয় ছিল’—বলেছেন মুশফিক।
কাল বাদে পরশু চট্টগ্রামেই শুরু হচ্ছে দুই টেস্টের সিরিজ। সেটার হোমওয়ার্ক তাহলে শুরু হয়ে গেছে কালই!

No comments

Powered by Blogger.