'৭৫-এর খুনিদের সহযোগীদেরও ঘৃণা করুন :প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু এবং শিশু রাসেলসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হওয়ার ঘটনা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। খুনিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, খুন করে কেউ কখনও শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেলসহ '৭৫-এর ১৫ আগস্টের খুনিদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে আগামী প্রজন্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে ওই খুনিদের সহযোগীদেরও ঘৃণা করতে হবে।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেলের খুনি ও তাদের দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন এবং শিশুদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে রক্ষায় আমাদের সহায়তা করতে পারে। শেখ রাসেল জাতীয়
শিশু-কিশোর পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাসস, ইউএনবি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘরে জন্ম নেওয়ার কারণেই রাসেলকে অত্যন্ত অল্প বয়সে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি এ নির্মম হত্যাকা ঘটায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পৃথিবীর কোথাও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা এবং শিশু রাসেলকে কচি বয়সে যে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শান্তিপ্রিয়, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাদের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে চাই।
পরিষদের চেয়ারম্যান রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবুল বারকাত এবং পরিষদের মহাসচিব মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী এমপি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন, গান ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
রাসেলের স্মৃতি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল বেঁচে থাকলে আজ দেশের পূর্ণবয়স্ক নাগরিকে পরিণত হতো; কিন্তু খুনিরা এতটাই নৃশংস ছিল যে, তারা রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের যে দু'জন সদস্য ওই কালরাতের হত্যাকা থেকে বেঁচে যান শেখ হাসিনা তাদের অন্যতম। সে ভয়াল রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, খুনিরা সেদিন বাড়ির ভেতর হত্যার উল্লাসে মেতে ওঠে।
১৫ আগস্টকে জাতির জন্য এক বিষাদময় দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিনের খুনিরা পশুর চেয়েও অধম ছিল। খুনিরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করেছে এবং একটি সদ্য স্বাধীন দেশের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। খুনিদের সাংসদ বানানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। কোনো অপশক্তি যাতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে। শিশুদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কোনো শিশুই যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষা সহায়তা বৃদ্ধিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী হিসেবে আমরা তার সব সম্পত্তি জনগণের কল্যাণে দান করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের শিশুরা একদিন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং তারা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি খাতে সুইডেনের সমর্থন কামনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সুইডেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল গণভবনে সুইডেনের সফররত পরিবেশমন্ত্রী লিনা একের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের এগ্রো-কেমিক্যাল খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। লিনা এক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, উভয় দেশই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার।
তিনি দু'দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

No comments

Powered by Blogger.