পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে যোগাযোগমন্ত্রীকে by জাকির হোসেন

দ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়তে পারেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এ জন্য পদ্মা সেতু বাস্তবায়নকারী এজেন্সি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে অব্যাহতি ও একই সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় অথবা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সংস্থায় রূপান্তর করা হতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যকার আলোচনার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


এদিকে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক।সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে সৃষ্ট সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পেতে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের
কান্ট্রি ডিরেক্টর এলেন গোল্ডস্টেইনের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে পদ্মা সেতু নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা পরিহারের প্রস্তাব দেন গোল্ডস্টেইন। যোগাযোগমন্ত্রীকে এ সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় না রাখলে অর্থ ছাড় শুরু করতে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজি হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। এ ব্যাপারে পদ্মা সেতু নিয়ে তৈরি সংকট উত্তরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক বৈঠক হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন শুরুর প্রতিশ্রুতি দিলে সরকার যোগাযোগমন্ত্রীকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবে না_ প্রাথমিকভাবে এমন একটি নীতিগত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন গোল্ডস্টেইন।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী ওই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব পদাধিকারবলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। সম্প্রতি সেতু বিভাগের সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, ভূমি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, খনিজসম্পদ বিভাগ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত রোববার পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে এবং সরকারি প্রেসনোট জারি করে সবকিছু জানানো হবে বলে ঘোষণা দেন। জটিলতা নিরসনে সরকার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। সরকারের ওই সিদ্ধান্তটি পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া থেকে যোগাযোগমন্ত্রীকে বাদ দেওয়া কি-না সমকালের সূত্র তা স্পষ্ট করেনি। সূত্র জানায়, যোগাযোগমন্ত্রীকে পদ্মা সেতু নির্মাণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলে বিশ্বব্যাংক অর্থ ছাড় করতে পারে এমন আভাস সরকারকে দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা বাদ দিলেও বিশ্বব্যাংক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহার করবে না। অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত অব্যাহত রাখবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মন্ত্রীর মালিকানাধীন সাকো ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের আনা অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রমাণসাপেক্ষে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার কথা জানালেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নানাজনের কাছে ঘুষ বা কমিশন চাওয়ার অভিযোগ করে এরই মধ্যে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ঘুষ বা কমিশন চাওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী নিজেও সাকোর পক্ষে চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা এ অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মহাজোট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান সমকালকে বলেন, 'অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ-ই আইনের ঊধর্ে্ব নয়।'

No comments

Powered by Blogger.