একজনের বিনিময়ে ১০২৭ জন!

হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সার্জেন্ট গিলাদ শালিতকে ফিরে পেয়েছে ইসরায়েল। এই প্রথম এত বড় মূল্য দিয়ে একজন মাত্র সেনাকে ফিরিয়ে আনল দেশটি। তাদের চোখে 'দাগি অপরাধী' এত সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে ইসরায়েলের যুক্তি নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণকারী দলগুলোর প্রাপ্তি নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে।ইসরায়েলের পক্ষ থেকে চুক্তিতে রাজি হওয়ার একটি কারণ বলা হচ্ছে, এটি ইসরায়েল ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে।


ইসরায়েলি সেনা ও তাদের পরিবারগুলো অনুধাবন করবে যে, দেশ তাদের জন্য যেকোনো কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছে। অনেক ইসরায়েলিই তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দেশের অভিভাবক এবং এক অর্থে দেশের প্রতীক বলেই মনে করে। প্রত্যেক সক্ষম ইসরায়েলির জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বলেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী না থাকলে, ইসরায়েলই থাকবে না। শালিতকে মুক্ত করে আনার বিষয়টি তাই প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আবেগ বাড়াবে।
ইহুদি সংস্কৃতিও শালিতের মুক্তির ব্যাপারে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। ইহুদি ধর্মের আইন ও নীতিমালার মূল আধেয় 'তিলমুদে' বলা আছে, একজনের জীবন বাঁচানো মানে পুরো বিশ্বকেই বাঁচানো। শালিতের আগেও অপহৃত সেনাদের ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টার নজির আছে ইসরায়েলের ইতিহাসে। আশির দশকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সদস্য রন আরাদকে লেবাননের আকাশসীমা থেকে অপহরণ করা হয়। ধারণা করা হয়, তাঁকে ইরানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তিনি আর বেঁচে নেই বলেও মনে করা হয়। তার পরও যতবারই রনকে মুক্ত করে আনার সুযোগ পেয়েছে, ইসরায়েল তাঁর জন্য অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে এক হাজার ১৫০ বন্দিকে মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন সদস্যকে মুক্ত করে আনার নজির ইসরায়েলের আছে। তাই হামাস এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে। কারণ শালিতকে সামরিক অভিযানে মুক্ত করে আনার কোনো সুযোগ ইসরায়েলের হাতে ছিল না।
ফিলিস্তিনি যেসব বন্দিকে ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছে, তাদের অনেকের ওপরই ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলার অভিযোগ ছিল। বন্দিদের কেউ কেউ দুই বা তিন দশক ধরে ইসরায়েলি কারাগারে ছিল। তবে মুক্তি পাওয়া অপরাধীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠবে কি না, তাই ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় আশঙ্কায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাগারে অবস্থানের সময় অন্য বন্দিদের কাছ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতায় আবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে_এমনটাও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে আপাতদৃষ্টিতে গাজার হামাস ও পশ্চিম তীরের ফাতাহকে জয়ী বলেই মনে হচ্ছে। যদিও শীর্ষস্তরের কিছু যোদ্ধাকে বন্দিত্ব থেকে নির্বাসনে পাঠাতে রাজি হয়েছে তারা, তারপরও অনেককেই দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার সুযোগ তারা পেয়েছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠার বিষয়টি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সূত্র : বিবিসি, হারেৎজ।

No comments

Powered by Blogger.