বিএনপির দুর্নীতিতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক : প্রধানমন্ত্রী by হাসানুল আজিজ ও আজিনুর রহমান আজিম,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, বিএনপির দুর্নীতির জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। তিনি গতকাল পাটগ্রাম জসিমউদ্দিন সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় এ মন্তব্য করেন। বিশাল এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে ডকুমেন্ট চেয়েছিলাম। তারা দুটি ডকুমেন্ট দিয়েছে, সে দুটিই বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।‘বরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া লংমার্চ করছেন। এটা লংমার্চ নয়, ওটা হচ্ছে গাড়ির একটা শো-ডাউন, কার র্যালি। তিনি ক্ষমতায় থাকতে কত টাকা কামাই করেছেন, তা প্রমাণ হয় ওই লংমার্চের গাড়িগুলো দেখলেই। প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর আমরা নিয়েছি।


কারা কীভাবে কিনেছে, তা আমরা দেখব।’গতকালের এই দিনব্যাপী সফরে প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেন। দুটি ছিটমহল এর মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডে যুক্ত হলো। শেখ হাসিনা ১০ শয্যার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সও উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় ভূখণ্ড তিনবিঘা করিডোর দিয়ে পাটগ্রামে যান। ’৪৭-এ ভারত উপমহাদেশ ভাগের পর এই প্রথম তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকছে। পাটগ্রামের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব থেকে দুঃখের বিষয়, উনি (খালেদা জিয়া) আমার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করেন। আমার পূর্বপুরুষের ইতিহাস আছে। আমি আমার চৌদ্দপুরুষের নামও বলতে পারি। আমি যদি বিরোধীদলীয় নেতাকে জিজ্ঞেস করি আপনার নানার নাম কী, তার বাড়ি কোথায়? তিনি কি বলতে পারবেন? আমি যদি জিজ্ঞেস করি, জিয়াউর রহমানের বাপের কবর কোথায়, মায়ের কবর কোথায়? ওরা তা বলবেন না। জীবনে বোধহয় শোনেননি জিয়াউর রহমানের বাপের কথা। এই দেশের প্রতি তাদের কোনো ভালোবাসা নেই, দায়িত্ব নেই। তিনি এখন নেমেছেন যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা রাজাকার, যারা মানুষ হত্যা করেছে, যারা খুনি—তাদের রক্ষা করার জন্য। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত জড়িত, তাদের রক্ষা করা। যেভাবে তারা চেষ্টা করেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের রক্ষা করতে। এমনকি জনগণের ভোট চুরি করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই খুনিদের পার্লামেন্টে মেম্বার করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, খুনিদের যে রক্ষা করতে চায়, রাজাকার আলবদরদের যে রক্ষা করতে চায়, মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষা করতে চায়—সে তো বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। উনার ছেলেরা জনগণের টাকা চুরি করেছে, কালো টাকা সাদা করেছে, দুর্নীতি করে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এখন ক্ষমতায় নেই। দুর্নীতি করে টাকা কামাই করতে পারছে না। এই আফসোসেই তিনি মরে যাচ্ছেন। আর আমরা যে জনগণের জন্য কাজ করছি, তা উনার ভালো লাগছে না।’
আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শান্তিতে আছে। মানুষ যখন শান্তিতে থাকে, তখনই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মনে অশান্তির আগুন জ্বলে যায়। উনি ক্ষমতায় যাবেন, লুটে খাবেন। বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন। মানুষ কেন শান্তিতে থাকবেন?’ সভায় সভাপতি ছিলেন পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শিগগিরই তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হবে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, রংপুরের ছেলে ক্ষমতায় থেকে রংপুর বিভাগ করতে পারেনি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রংপুরকে বিভাগ করেছে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এ কারণে এ অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবে।
বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওনার ছেলেদের উনি শিক্ষা দিয়েছেন। উনি ওনার ছেলেদের চুরি করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি চোরের মায়ের বড় গলা বলেও মন্তব্য করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় বলেন, দহগ্রাম ছিটমহলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বন্দিদশায় ছিলেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দহগ্রামবাসীর স্বপ্ন পূরণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ২৪ ঘণ্টা তিনবিঘা করিডোর গেট খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দহগ্রামবাসীকে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্ত করেছে। তাই অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ সব মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকার সবসময় লুটপাট করেছে আর আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়কে স্নাতক পর্যন্ত এবং দাখিল মাদরাসা এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন।
তিনি আরও বলেন, ভিজিএফ ও ভিজিডি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দরিদ্র লোকজনের ভাগ্য পরিবর্তন করা হবে। দহগ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দহগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল হোসেন প্রধানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ. ফ. ম. রুহুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মোতাহার হোসেন, বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) এনামুল হক, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী, দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার এবং তার ছোট বোনের সব সম্পত্তি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে দেশের মানুষের কল্যাণে, দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বিনামূল্যে করার জন্য দেয়া হয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়ে হেঁটে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তিনবিঘা করিডোর পরিদর্শন করেন।
বাসস জানায় : ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) একটি চৌকস দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। প্রধানমন্ত্রী করিডোরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
ভারত ৮ সেপ্টেম্বর তিনবিঘা করিডোর দিয়ে মূল ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশীদের ২৪ ঘণ্টা যাতায়াতের অনুমতি দেয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সফরে আসেন। এর আগে কেবল দিনের বেলা এই করিডোর খোলা রাখা হতো।
তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখতে তার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সালে ভারত সফরকালে এটি ছিল আমার অন্যতম প্রধান দাবি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিনবিঘা করিডোর দিয়ে বাংলাদেশীদের ২৪ ঘণ্টা চলাচলের অনুমতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে আমার দাবি বাস্তবায়ন হয়।
শিগগিরই সব ছিটমহল বিনিময় করা হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় ইস্যুতে বিরাজমান সমস্যাগুলোর খুব শিগগিরই সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তিনবিঘা সফরকালে দু’দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশীদের জন্য তিনবিঘা করিডোর খুলে দেয়া দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমত্কার সম্পর্কেরই একটি নিদর্শন।
তিনি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা তিনবিঘা করিডোর ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি এ ছিটমহলের জনগণের ৬৪ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসানে সহায়ক হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমরা এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি, অতএব খুব শিগগিরই অন্য ছিটমহলগুলোও হস্তান্তর করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.