স্যামির আশা-হতাশা

ট্রফিটা হাতে নিয়ে কী মনে হচ্ছিল ড্যারেন স্যামির? ট্রফি জয়ের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাসটা যে ছিল না, এটা সবাই দেখেছেন। তাহলে কি মনের ভেতর একটা ঝড় চলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের?
সংবাদ সম্মেলনে সব সময়ই তাঁর মুখে হাসি লেগে থাকে। ব্যতিক্রম ছিল না কালও। মুখে হাসি নিয়েই ঢুকলেন, বসেও হাসি। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম প্রশ্ন ছিল ‘৬১’ বিপর্যয় নিয়ে, শুনে আবারও খুব একচোট হাসলেন স্যামি। ভঙ্গিতে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘আরে, এমনটা তো হতেই পারে!’
তা অবশ্যই পারে। তবে আগের দুই ম্যাচের সঙ্গে কালকের ব্যাটিংয়ের পার্থক্য এতটাই যে, স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
মিরপুরের উইকেট নিয়ে অসন্তুষ্টি ও বিস্ময় সরাসরিই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের স্পিনারদের খেলতে কোনো সমস্যাই হয়নি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের। ঘরের মাটিতে সুবিধা বাংলাদেশ কতটুকু পাচ্ছে, এমন প্রশ্নও উঠছিল। চট্টগ্রামের মন্থর ও টার্ন থাকা উইকেটে এসেই কী তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের মূল চেহারা বেরিয়ে এল?
উইকেট একটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মানছেন স্যামি, তবে স্পিনিং উইকেটে নিজেদের দুর্বলতা মানছেন না, ‘উইকেট ওদের পক্ষে ছিল, টার্ন পাওয়া গেছে। তবে আগের দুটো ম্যাচের দিকে তাকান, দেখতে পাবেন আমাদের বেশ কটি বড় জুটি হয়েছিল। কাল জুটি হয়নি, আমরা নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারিনি। টেস্টে নিজেদের ভালোভাবে মেলে ধরা চাই। এমন উইকেটেই কদিন আগে আমরা টেস্টে পাকিস্তানকে হারিয়েছি। সেটির পুনরাবৃত্তি এখানেও করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’
ব্যাটসম্যানরা আরেকটু দেখে খেললে ফল অন্য রকম হতে পারত বলেও বিশ্বাস স্যামির, ‘ব্যাটসম্যানরা উইকেটের আচরণ দ্রুত বুঝতে পারেনি। স্পিনের বিপক্ষে আমরা প্যাড একটু বেশিই পেতে দিয়েছি। বাংলাদেশকে একবার জেঁকে বসতে দিয়েছি, এরপর ওরা আর আমাদের ম্যাচে ফিরতে দেয়নি। উইকেট দেখে মনে হয়েছে, আমরা ১৫০ রান করতে পারলেই হয়তো অন্য রকম কিছু দেখা যেত।’
আগের দিন স্যামিকে ভীষণ উৎসাহী মনে হয়েছে চার পয়েন্টের জন্য। কাল তো ভিন্ন গল্প। এ অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক বেশি হতাশ প্রথম দুই ম্যাচ সহজে জেতা সিরিজটার এমন সমাপ্তিতে। জানালেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে এভাবেই বিধ্বস্ত করার স্মৃতিটাও এদিন উঁকি দিয়েছিল তাঁদের মনে। তবে এটা যে স্রেফ একটা খারাপ দিনের ব্যাপার, বারবার সেটি বলছিলেন জোর দিয়ে।
৬১-র লজ্জা নয়, চার বছর পর বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়টাই নাকি স্যামির কাছে বড়, ‘সিরিজ জয়টা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজে আমরা অনেক ভালো কিছু করেছি। আমরা জানতাম, বাংলাদেশ গত অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ বা ৪-০তে হারিয়েছে। দেশের মাটিতে সিরিজ তাদের হারানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
সত্যিই কী তাই? আগামী কয়েক দিন বা আরও অনেক দিন পরও সিরিজ জয়ের চেয়ে এই ‘৬১’ নিয়ে প্রশ্নই বেশি শুনতে হবে না স্যামিকে? একসময়ের প্রবল পরাক্রমশালী ক্রিকেট-শক্তির জন্য এটা বড় একটা লজ্জাও কি নয়! সিরিজ জয়টা অবশ্যই স্বস্তির, তবে ৬১-র উত্তাপটাও স্যামি হয়তো টের পাবেন শিগগিরই। প্রশ্নটা তাই সময়ের হাতেই তোলা থাক!

No comments

Powered by Blogger.