এরশাদকে নিয়ে নির্বাচনের স্বপ্ন হবে গুড়েবালি-পথসভা ও জনসভায় খালেদা by হাসান শিপলু ও মোহন আখন্দ,

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারি দলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এরশাদকে নিয়ে নির্বাচন করার যে স্বপ্ন আপনারা দেখছেন তা গুড়েবালি হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও এরশাদ ছাড়া অন্য কোনো দল রাজি নয়। দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসতেই হবে। খালেদা জিয়া বলেন, দুর্র্নীতির কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ হওয়া দেশের জন্য 'লজ্জাজনক'। এতে চুরি নয়, ডাকাতি হয়েছে। এ দুর্নীতির সঙ্গে 'টপ লেভেল' জড়িত। ওই দুর্নীতির পেছনে কারা রয়েছে তার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্বব্যাংক দিয়েছে। দুর্নীতির কাগজপত্র তাদের কাছেও আছে।


খালেদা জিয়া ঘোষণা করেন সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন চলবে। ঘরে ঘরে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়বে। সেই আগুনে সরকার 'জ্বলে-পুড়ে ছারখার' হয়ে যাবে। উপস্থিত জনতাকে ঢাকা ঘেরাওয়ের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে ভবিষ্যতে স্বতঃস্ফূর্ত জনগণকে ঢাকা অভিমুখে যেতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চে পথসভায় এবং বগুড়ার জনসভায় খালেদা জিয়া বক্তৃতা করেন। দ্বিতীয় রোডমার্চের প্রথম দিন গাড়িবহর ২৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আজ বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে রোডমার্চ। এর আগে নওগাঁর এটিএম হাইস্কুল মাঠে আজকের একমাত্র পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল তিনটি পূর্বনির্ধারিত পথসভা_ গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর এবং সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে বক্তব্য রাখেন তিনি।
পথসভা শেষে পড়ন্ত বিকেলে খালেদা জিয়া বগুড়া আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আসেন। বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে জনসভা মঞ্চে ওঠেন। সেখানে চার দলের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম। এর আগেই জনসভাস্থল ও আশপাশ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুর থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী আসেন আলতাফুন্নেছা মাঠে। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া সরকারের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় এলে তার সরকারের পরিকল্পনার কথাও জানান। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে পথসভায় মিছিল নিয়ে আসার পথে আওয়ামী লীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়া ওই পথসভায় অভিযোগ করেন, সরকার বিভিন্ন স্থানে বাধা দিচ্ছে। সরকার রোডমার্চকে ভয় পাচ্ছে।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটে উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে সহস্রাধিক গাড়ি নিয়ে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন খালেদা জিয়া। ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি রাস্তায় বহু মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ছিল অগণিত তোরণ। বড়
ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বিঘ্নে দ্বিতীয় রোডমার্চের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
মহাসড়কের দু'পাশে দণ্ডায়মান বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হাতে ছিল লাল-নীল পতাকা। ড্রাম বাজিয়ে, খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দিয়ে রোডমার্চকে উৎসাহ জোগান তারা। বিভিন্ন স্থানে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রতিকৃতি স্থান পায়। সাদা রঙের পাজেরো জিপে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান। জনসভা শেষে খালেদা জিয়া গাড়িবহর নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বগুড়া সার্কিট হাউসে পেঁৗছান। সেখানে তিনি রাতযাপন করেন। রাতে বগুড়ার সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। আজকের জনসভা শেষে রাতেই তিনি ঢাকা ফিরবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি অগ্রবর্তী দল প্রতিটি পথসভাস্থলে আগে গিয়ে সেখানকার প্রস্তুতি দেখভাল করেছে। এ দলে রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ। এ রোডমার্চে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ সমমনা দল ও পেশাজীবী নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা রোডমার্চে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে রয়েছেন।
বগুড়ার জনসভা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বগুড়ার জনসভায় বলেন, সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও জনগণ আর নিরাপদ নয়। তাদের পতন ও বিদায়ের জন্য ভবিষ্যতে এভাবে জনগণকে ঢাকা অভিমুখে এগোতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকারের সঙ্গে দেশের মানুষ নেই। এ সরকার ব্যর্থ, অযোগ্য। তিন বছর তারা দেশে কোনো কাজ করেনি। বগুড়াসহ সারাদেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হবে কী করে? সব তো লুটপাট করে খাচ্ছে।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলছে, পদ্মা সেতু হবে। এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পদ্মা সেতুতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুর্নীতি হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে পররাষ্ট্রনীতি বলতে কিছু নেই। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষানীতি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে কোনো লোক যেতে পারছে না। অনেকেই ফিরে আসছে। বিডিআরকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। নাম-পোশাক পাল্টে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত অরক্ষিত।
তিনি বলেন, বিএনপির সময় শেয়ারবাজারে কোনো অনিয়ম হয় না; কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজারে লুটপাট হয়। '৯৬ সালে লুটপাট হয়েছিল। এবারও লুটপাট হয়েছে। ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। প্রায় সোয়া কোটি মানুষ আজ নিঃস্ব।
তিনি বলেন, সরকার জানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। এ কারণে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতেই সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিল আওয়ামী লীগেরই দাবি।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ ইসি অনেক কারচুপি করেছে। উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অনেক কারচুপি হয়েছে। তা না হলে বিএনপির ফল আরও ভালো হতো।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলছে। বিচার করবেন। আপত্তি নেই। কিন্তু বিচার হতে হবে স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানের। ট্রাইব্যুনালে বিদেশি আইনজীবীদের নিয়োগ করার সুযোগ থাকতে হবে। বর্তমান ট্রাইব্যুনাল দলীয় এবং ঘাদানিক নিয়ে গঠন করা হয়েছে। সরকারের নিজ দলের এবং তার পরিবারের লোকেরাও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের কেন ধরা হচ্ছে না?
তিনি বলেন, প্রহসনের বিচার বন্ধ করুন। তাদের মুক্তি দিন। আন্তর্জাতিক মানের আদালত গঠন করুন। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জনগণ বলে জেলের তালা ভাঙবো, অমুক ভাইকে আনবো। কিন্তু আমি বলছি, আপনারা জেলের তালা ভাঙবেন না। যারা জেলে আছে তারা এমনিতেই বেরিয়ে আসবেন। যারা এখন অনিয়ম করছে তাদের জেলে যেতে হবে। তখন নতুন করে তালা বানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তারা একটি দেশের হাতে দেশকে তুলে দিতে চায়। এ সরকারের তিন বছরের শাসনে আমরা কিছুই পাইনি। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আমাদের সহায়তা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা সরকারের কথায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন তাদের ভবিষ্যতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেডএ গণি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইবরাহীম, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ ইসাহাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জামায়াতে ইসলামীর হামিদুর রহমান আযাদ এমপি।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গে রোডমার্চ কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী ওসমান ফারুক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও নাজিম উদ্দিন আলম।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সাজা দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তারেক রহমানকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানোর নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মুফতি হান্নান নামে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তারেক রহমানের কখনও দেখা হয়নি। কিন্তু সেই মুফতি হান্নানের কথিত স্বীকারোক্তির বলে চক্রান্তমূলকভাবে তারেক রহমানকে গ্রেনেড হামলায় জড়ানো হয়েছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ অভিযোগ করেন, দেশের স্বার্থে কথা বলার জন্যই জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, জামায়াত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সবসময় জনগণের স্বার্থে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে চায়। সরকার জামায়াত নেতাকর্মীদের ঘর থেকেই বের হতে দিচ্ছে না।
প্রজেক্টরের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার ভাষণ প্রচার : জনসভাস্থল শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শহরের আটটি স্থানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বক্তব্য সরাসরি প্রচার করা হয়। এ ছাড়া মাঠের ভেতরে ও বাইরে দেড়শ' মাইক লাগানো হয়। রোডমার্চ ও জনসভার কারণে গতকাল সকাল থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে বগুড়ায় আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যেই বগুড়া হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী। মিছিলের পর মিছিল আর জনতার ভিড়ে দুপুর ২টার মধ্যেই শহরের সব প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় জনসভা শেষ হওয়ার পর যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
শিবিরকে হটিয়ে মঞ্চের সামনের জায়গা দখলে নিল ছাত্রদল : ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েকশ' নেতাকর্মী গতকাল মঙ্গলবার সকালে টুপি পরে আলতাফুন্নেছা জনসভা মঞ্চের একেবারে সামনের জায়গা দখল করে সেখানে অবস্থান নেন। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীরাও তাদের অনুসরণ করে মঞ্চের সামনের দিকে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন। এভাবে মঞ্চের সামনে এককভাবে অবস্থান নিয়ে নিজেদের জাহির করার বিষয়টি বিএনপি নেতাকর্মীর মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অনেকেই এ নিয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। অবশ্য দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ক্ষুব্ধ কয়েকশ' ছাত্রদল নেতাকর্মী একযোগে সভাস্থলে ঢুকে শিবির ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের হটিয়ে দিয়ে মঞ্চের সামনের জায়গায় বসে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে শিবির ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুষা চললেও এ নিয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য চোখে পড়েনি।
কালিয়াকৈর : খালেদা জিয়া বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও এরশাদ ছাড়া অন্য কোনো দল রাজি নয়। তাই সরকারকে বলব, এরশাদকে নিয়ে নির্বাচন করার যে স্বপ্ন আপনারা দেখছেন সেটি গুড়েবালি হবে। আগামী নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও আসতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
সরকারকে 'ব্যর্থ' আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন তাদের একমাত্র অবলম্বন পুলিশ বাহিনী। এ বাহিনী দিয়ে জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। তিনি পুলিশ বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
ভূঞাপুর : দুর্র্নীতির কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হওয়াকে দেশের জন্য 'লজ্জা' অভিহিত করেন খালেদা জিয়া। ওই দুর্নীতির পেছনে কারা দায়ী তার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে দিয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। ভূঞাপুরের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে পথসভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
পথসভায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ভাসানী যেভাবে সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তেমনি টাঙ্গাইলের মানুষ এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে রাজপথে নামবেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি আহমেদ আজম খান।
হাটিকুমরুল : চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে মঙ্গলবার রোডমার্চে সরকার বিভিন্ন স্থানে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলের পথসভায় তিনি এ অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, সরকার আমাদের রোডমার্চকে ভয় পাচ্ছে। অনেক গাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেছে। এভাবে বাধা দেওয়ার পরিণতি শুভ হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
 

No comments

Powered by Blogger.