মাদার তেরেসার ভাবশিষ্যা- জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ৮৩ বছরের মারিয়া

মাদার তেরেসার সানি্নধ্য আর হাতে কলমের শিক্ষায় শিতি হয়ে তাকে অনুসরণ করেই মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের উত্তাল মুহূর্তে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচিয়ে ছিলেন বরিশালের তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার কাঠিরা গ্রামের জুয়েল কর্মকারের স্ত্রী মারিয়া কর্মকার।
বর্তমানে তার বয়স ৮২'র কোঠাকে অতিক্রম করে ৮৩ কোঠায় পড়লেও এখনও তিনি কথা বলেন মহাদাপটের সঙ্গে।
একান্ত আলাপকালে মারিয়া কর্মকার বলেন '৭১-র বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা। যুদ্ধ চলাকালীন সময় নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে বিভিন্ন এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধারা কাঠিরা গ্রামে আশ্রয় নিয়ে সংগঠিত হতে থাকেন। তখন তার (মারিয়ার) বয়স ৪৫ বছর। স্থানীয় রাজাকারদের কাছে এ খবর পেয়ে গৌরনদী কলেজে অবস্থানরত পাকসেনারা ১৯৭১ সালের ২০ মে সকালে কাঠিরা বাজারে দু'জন ভিুককে হত্যা করে পুরো গ্রামটিকে ঘেরাও করে ফেলে। এ সংবাদ পেয়ে কাঠিরা গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচার জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরম্ন করেন। ৪৫ বছরের মারিয়া কর্মকার তখন স্থানীয় মিশনারি স্কুলের শিকিা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোটাছুটি করতে দেখে তিনি তাদের বাঁচাতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। মিশনের একটি ক েতিনি শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে আটকিয়ে রেখে বাইরে থেকে দিয়ে তালাবদ্ধ করে দেন। ওই রম্নমের সামনে তিনি একটি বাইবেল হাতে নিয়ে পড়ার ভান করে বসে ছিলেন। কিছুণ যেতে না যেতেই পাকসেনারা মিশনের সামনে এসে পেঁৗছে যায়। পাকসেনাদের সঙ্গে মারিয়া ইংরেজীতে কথা বলার পরেও ওই মিশনটি তারা তলস্নাশি করার কথা বলে। ভয়ে কাতর মারিয়া পুনরায় পাকসেনাদের সঙ্গে ইংরেজীতে কথা বলার পরে তারা (পাকসেনারা) মিশন এলাকা ত্যাগ করে। একটু এগিয়েই পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধা ললিত কর্মকার, অমল, স্বপনসহ ৫ জনকে ধরে ফেলে। একপর্যায়ে তাদের ফায়ার এস্কটের জন্য পাকসেনারা লাইনে দাঁড় করায়। ঠিক ওই সময় মারিয়া হালদার পাকসেনাদের সম্মুখে গিয়ে পুনরায় ইংরেজীতে কথা বলে বলেন, ওরা আমাদের মিশনের স্টাফ (কর্মচারী)। এ কথা বলে ওই ৫ জনকেও প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন মারিয়া।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মারিয়া কর্মকার বলেন, এত কিছুর পরও ওই হানাদাররা কাঠিরা গ্রামে আশ্রয় নেয়া ৪৫ মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ফায়ার এস্কট (গুলি করে) হত্যা করে।
তৎকালীন গৌরনদী উপজেলার পতিহার গ্রামের কালীচরণ পান্ডের কন্যা মারিয়া। ১৯৪৪ইং সালে মাদার তেরেসা পরিচালিত কলকাতার সেন্ট মেরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি মাদার তেরেসার সানি্নধ্য লাভ করেন। বলেন, তখন মাদার তেরেসার বয়স ছিল ৩৫ কি ৩৬ বছর। তিনি (মাদার তেরেসা) নিজ সনত্মানের ন্যায় আমাদের শিায় শিতি করেছেন। ১০ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মারিয়া তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মান বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের নিজ বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তখন তার বয়স ছিল বিশের কোটায়। বাবা তার ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে পার্শ্ববর্তী কাঠিরা গ্রামের জুয়েল কর্মকারের সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর আর লেখাপড়া করা হয়নি মারিয়ার। ১৯৬৮ সালে তিনি বোর্ড স্কুলের শিকতা শুরম্ন করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি সিসিডিবি ব্যাপ্টিস স্কুল ও মিশনারি স্কুলে শিকতা করেন। সংসার জীবনে ৩ পুত্র ও ২ কন্যাসনত্মানের জননী মারিয়া কর্মকার।
৮৩ বছরের এই বৃদ্ধা আজো মাদার তেরেসার ছবি নিয়ে প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, ঈশ্বর মানুষ রূপে যিশু ও মাদার তেরেসাকে এ ধরায় পাঠিয়েছিলেন। যুগে যুগে যিশু ও মাদার তেরেসা থাকবেন এ বিশ্ববাসীর হৃদয়ের মাঝে। তাই তিনি আজো মাদার তেরেসাকে অনুসরণ করে এ বৃদ্ধ বয়সেও এলাকাবাসীর কল্যাণেই ছুটে চলেন।

০ খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী

No comments

Powered by Blogger.