যশোরের সাগরদাঁড়ীতে শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী ‘মধুমেলা’

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা শেষ হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি ১৮২৪-২৯ জুন ১৮৭৩) উনিশ শতকের একজন জনপ্রিয় বাঙালি কবি ও নাট্যকার।
তিনি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী গ্রামে কপোতা নদের তীরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা নাটকের অন্যতম পথিকৃৎ। তার সুবিখ্যাত রচনা  মেঘনাদবধ কাব্য একটি ট্র্যাজিডি-নির্ভর মহাকাব্য, যা নয় স্বর্গে লিখিত। মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশের মাধ্যমে তিনি নিজেকে নতুন ধারার গাম্ভীর্যপূর্ণ রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপণ করেন, যা আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুতে হোমেরিক এবং দান্তের বীরত্বগাথায় অনুপ্রাণিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল্যায়নে তার সৃষ্ট মেঘনাদবধ কাব্য  বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ সম্পদ।

তিনি একাধারে বাঙালি শাশ্বত নারীর বিবরণে তাদের দুঃখগাথা ও মায়া মমতানির্ভর কালজয়ী কবিতা লিখেছেন। মাইকেলের কবিতা আত্মসচেতন ও মুক্তচেতনায় উজ্জীবিত নারীর মূর্ত প্রতীক, যা বিগত শতকের নির্যাতিত ও নিপীড়িত নারীর ধারণাকে পাল্টে দেয়। বীরাঙ্গনা নাটকে (১৮৬২) জনা, কাইকেয়ী ও তারার সাহসী উপস্থাপনাই ছিল বাংলা সাহিত্যের নবযাত্রা। তিনি বাংলা সনেটের জনক। এই কিংবদন্তি কবি ও নাট্যকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রতি বছর মধুমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সাত দিনব্যাপী এই মেলার অন্তর্গত বিষয়াবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ সঙ্গীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, নাটক এবং প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে আলোচনা। এবার নিয়ে পরপর পাঁচবারের মতো বাংলালিংক মধুমেলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এই মেলার আয়োজন করেছে যশোর জেলা প্রশাসন।

মধুমেলার পঞ্চম দিনে মধুকবির নামে দু’টি পদক দেয়া হয়েছে। এ বছর মহাকবি মধুসূদন পদক পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার। এ ছাড়া মহাকবি মধুসূদন বিশেষ সম্মাননা পদকে ভূষিত হয়েছেন বিশিষ্ট লেখক ও মাইকেল মধুসূদন গবেষক ড. গোলাম মুরর্শিদ। পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাইকেল গবেষক ও বাংলালিংকের কর্মকর্তারা। শেষ দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাপটেন (অব:) এ বি তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম. হামিদ, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন; মো: বাবুল হক, রিজিওনাল কমার্শিয়াল হেড, খুলনা, বাংলালিংক; জয়দেব কুমার ভদ্র, পুলিশ সুপার, যশোর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো: জহুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) যশোর।

No comments

Powered by Blogger.