আদিবা হত্যা মামলার রায় আজ-প্রথম দায় স্বীকারকারী আসামিই বাদ! by আশরাফ-উল-আলম

নরসিংদীর ঘোড়াশাল সার কারখানা কলোনিতে খুন হওয়া অষ্টম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী মাইশা মাহজাবিন আদিবা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আজ সোমবার। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শাহজাহান এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এ মামলায় হত্যার দায় স্বীকারকারী এক আসামিকে বাদ দিয়ে অন্য এক ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
মামলার নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, এ মামলায় শাহ কামাল নামের এক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে তাকে বাদ দিয়ে মিজানুর রহমান নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে তার স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। তবে পুলিশ তাদের অভিযোগপত্রে শাহ কামালের দেওয়া স্বীকারোক্তির কথা পরে আর উল্লেখ করেনি। তাই কোনো কোনো আইনজীবী মনে করছেন, পুলিশ ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতেই আগে গ্রেপ্তার আসামির বিষয়টি অভিযোগপত্রে গোপন করেছে। ফৌজদারি আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এক আসামি দায় স্বীকার করলেই যে সে দোষী হবে- এমন কোনো কথা আইনে নেই। তবে তাকে বাদ দিতে হলে অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। এটা যদি উল্লেখ করা না হয়, তবে ধরে নিতে হবে পুলিশের এই ভূমিকা রহস্যজনক।'
আসামি মিজানুরের আইনজীবী আবদুল হান্নান বলেন, 'আসামি শাহ কামালকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমার নলেজে আসে শেষের দিকে। তখন আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় তলব করতে আদালতে দরখাস্ত দিই। আদালত তাঁকে তলব করলে আমি জেরা করি।' এ ক্ষেত্রে মামলার অধিকতর তদন্ত হতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন।
গত বছর ২৬ জানুয়ারি ঘোড়াশাল সার কারখানার আবাসিক এলাকার বাসার কর্মচারী মাহমুদ আলমগীরের মেয়ে আদিবা খুন হয়। আদিবা স্থানীয় ইসা খাঁ স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় আলমগীর পলাশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ পাশের বাসার মালিকের ভাগ্নে শাহ কামালকে গ্রেপ্তার করে। তাকে আদালতের মাধ্যমে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. হেদায়েত উল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শাহ কামাল পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে কামাল বলে, 'টাকার বিশেষ প্রয়োজন থাকায় দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকে চুরি করতে চেয়েছিলাম। আদিবা দেখে ফেলায় তাকে খুন করি।' ওই দিনের পুলিশ প্রতিবেদনে এই স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এর অনুলিপি কালের কণ্ঠের হাতে রয়েছে।
ঘটনার কয়েক দিন পর মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় একই থানায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বদরুল আলম খানকে। তিনি ওই আসামিকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু আসামির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে কোনো তথ্য আদালতে না দিয়ে ঘটনার দুই মাস পর একই ভবনের আরেক বাসার এক যুবক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন তিনি। মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, কামাল পুলিশের কাছে যে জবানবন্দি দেয়, মিজানুরও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একই ধরনের জবানবন্দি দেয়। এভাবেই একই অপরাধের দুই দাবিদার দেখা দেয়।
মিজানুরের বোন নুরুন্নাহার জয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, শাহ কামালই গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ওই আসামির জড়িত থাকার বিষয় চেপে যায় পলাশ থানা পুলিশ। জয়া আরো বলেন, তাঁর ভাইকে আসামি করার পর তাঁর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আজ সোমবার নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান এই রায় ঘোষণা করবেন বলে আসামি মিজানুরের বোন নুরুন্নাহার জয়া কালের কণ্ঠকে জানান।
পুলিশ পরিদর্শক বদরুল আলম খান তদন্ত শেষে গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে দ্বিতীয় জবানবন্দি দেওয়া আসামি মিজানুর রহমানকে আসামি করা হয় এবং শাহ কামালকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে কামালকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হলেও তার স্বীকারোক্তির বিষয়টি রাখা হয়নি।
বিচার চলাকালে আসামির জবানবন্দি : মামলার বিচারিক নথিতে দেখা যায়, গত বছর ৭ অক্টোবর আসামি মিজানুর আদালতে জবানবন্দি দেয়। এ সময় সে জানায়, তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ দুই দিন আটকে রেখে বেদম মারধর করে। এরপর আবার চার দিনের রিমান্ডে আনা হয় তাকে। এ সময় তাকে হুমকি দেওয়া হয়, পুলিশের কথামতো জবানবন্দি না দিলে ক্রসফায়ার করা হবে। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে তাকে দিয়ে জবানবন্দি লেখা একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলেও দাবি করে মিজানুর।

No comments

Powered by Blogger.