জিএসপি সুবিধা-লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ কংগ্রেস প্রতিনিধিদের

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ প্রবেশাধিকার সুবিধা (জিএসপি) অব্যাহত রাখতে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির কংগ্রেস প্রতিনিধিদল। তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কোটামুক্ত বা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যসহ নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশকে আরো পরিচিত করে তুলতে লবিস্ট নিয়োগ করা হলে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ সহজ হতে পারে। ঢাকা সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গতকাল রবিবার আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের সম্মানে তিনি গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন। ওই সময় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মধ্যাহ্ন ভোজের সময় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশেষ করে অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। সফরে আসা কংগ্রেস সদস্যরা বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে অনেক যোগাযোগ হচ্ছে। কংগ্রেস সদস্যদের বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে তাঁরাও এ দেশের ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে সফরকারী কংগ্রেস সদস্যদের ধারণা অত্যন্ত ইতিবাচক। তাঁদের সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরাও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয়টি দেখতে কংগ্রেস সদস্য জ্যাক কিংস্টনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি শনিবার রাতে বাংলাদেশ সফরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তারা সাক্ষাৎ করেছে।
বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা থাকবে কি থাকবে না, এ ইস্যুতে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্যদের জানানোর পরামর্শ দিয়েছে। তারা মনে করে, বাংলাদেশের পক্ষে কংগ্রেস সদস্যরা কথা বললে, তা এ দেশের জন্য লাভজনক হবে। তাই তারা লবিস্ট নিয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ এ বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পোশাক শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা ও শ্রমিক সংগঠন করার স্বাধীনতার মতো ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের সংখ্যা বিবেচনা করলে দেখা যাবে, পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে।
আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার কাঠামো চুক্তি (টিকফা) ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান।
পোশাক শিল্প-কারখানায় আগুন : সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের সময় আবারও পোশাক শিল্প-কারখানায় আগুন লাগার ঘটনাটি উল্লেখ করে সরকার এর পেছনে নাশকতার আশঙ্কা করছে কি না- তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'কোনো কিছুই সরলভাবে দেখার উপায় নেই। এর আগে পোশাক শিল্প-কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ভিডিও আমরা দেখেছি। শনিবারের ঘটনাটিও সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবেন।'
ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ চুক্তি : এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে সোমবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হবে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'চুক্তি হওয়া মানেই সব কিছু হয়ে যাওয়া নয়। চুক্তির আওতায় প্রতিটি বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
বাচ্চু রাজাকার : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের অবস্থান সম্পর্কে জানা থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বাচ্চু রাজাকারের অবস্থান সম্পর্কে জানেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে আমাদের তথ্য বিনিময় হবে। তখন তাঁকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

No comments

Powered by Blogger.