সমুদ্রগামী জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ by নূরুল মোস্তফা কাজী

চট্টগ্রাম বন্দর সীমানায় গমনাগমনকারী সমুদ্রগামী জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত সমুদ্রগামী জাহাজে অর্ধশতাধিক দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে।
কোস্টগার্ডের অভিযানে মাঝেমধ্যে জলদস্যুরা ধরা পড়লেও বেশির ভাগ েেত্রই জাহাজের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায় তারা। এমন পরিস্থিতিতে শিপিং সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা। পাশাপাশি সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে আইএমবির কালো তালিকা থেকেও বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশের নাম।

মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, উল্লেখযোগ্য মেরিটাইম ক্রাইমের মধ্যে রয়েছেÑ জাহাজে উঠে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া, চুরির উদ্দেশে জাহাজে ওঠার চেষ্টা, জাহাজি ক্রুদের বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও সশস্ত্র ডাকাতি। সব ধরনের মেরিটাইম ক্রাইমই ঘটছে চট্টগ্রাম বন্দর সীমানায়। এ ধরনের অপরাধের ঘটনা বহির্বিশ্বে শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ুণœ করছে। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) বাংলাদেশী টেরিটরিয়াল ওয়াটার এরিয়াকে সমুদ্রগামী জাহাজে সশস্ত্র ডাকাতির উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় আইএমবি তাদের কালো তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিচ্ছে না বলে সূত্র জানায়। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দর সীমানার নিরাপত্তাব্যবস্থা রীতিমতো উদ্বিগ্ন করে তুলছে শিপিং ব্যবসায়ীদের। এই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত অর্ধ শতাধিক সমুদ্রগামী জাহাজ জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বন্দর সূত্র জানায়, বিদায়ী বছরে বন্দর সীমানায় ৫১টি বিদেশী জাহাজ জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হয়। যদিও জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ঘটনা ছাগল, মুরগি ও সবজির বিনিময়ে জাহাজের মূল্যবান রশিসহ বিভিন্ন দ্রব্য স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে তা দস্যুতা হিসেবে প্রচার করার নজিরও রয়েছে।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারিতে একটি, ফেব্র“য়ারিতে একটি, মার্চে তিনটি, এপ্রিলে দু’টি, মে মাসে পাঁচটি, জুনে সাতটি, জুলাইয়ে ছয়টি, আগস্টে ১৪টি, সেপ্টেম্বরে পাঁচটি, অক্টোবরে দু’টি, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে একটি করে দস্যুতার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চলতি মাসেও এ পর্যন্ত তিনটি জাহাজ জলদস্যু আক্রান্ত হয়েছে বলে সূত্র জানায়। এসব পাইরেসির ঘটনা বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমর্যাদা ুণœ করছে বলে বন্দরসংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

এ দিকে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক সময় বন্দর সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা ছিল মাছ ধরা। ’৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন সময়ে উত্তাল সাগরে মাছ ধরার নৌকাগুলো হারিয়ে ফেলেছে বেশির ভাগ মাছ শিকারি। ফলে তারা বিভিন্ন মহাজনের মালিকানাধীন মৎস্য শিকারি বোটে কাজ নেন। কিন্তু অনেকেই উপযোগী কর্মপরিবেশ না পেয়ে মাছ ধরার পেশা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে জড়িয়ে পড়েন দস্যুতায়। সরকার চাইলে এসব মানুষকে পুনর্বাসন করতে পারে উল্লেখ করে সূত্র দাবি করে অল্পসংখ্যক লোককে পুনর্বাসনের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশী ইমেজ রা করা যাবে।

সূত্র দাবি করেছে, কোস্টগার্ডের সার্বণিক নজরদারির মাধ্যমে দস্যুতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমানে আক্রান্ত জাহাজ থেকে বন্দরের রেডিও কন্ট্রোলে রিপোর্ট করার পর খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের টহল দল পৌঁছতে পৌঁছতেই জলদস্যুরা সটকে পড়ে। বহির্নোঙরে নোঙররত সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর আশপাশে কোনোভাবেই যাতে স্থানীয় নৌকা বা বোট  ঘোরাফেরা করতে না পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে সূত্র দাবি করেছে। এ েেত্র সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলেও বন্দর সূত্র দাবি করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট দফতরের মাঝে সমন্বয়হীনতার কারণেই মূলত বন্দর সীমানায় পাইরেসি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সূত্র দাবি করেছে, আইএমবির কালো তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিতে সময়ে সময়ে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত আইএমবি তাতে সায় দেয়নি বলে সূত্র জানায়।

No comments

Powered by Blogger.