জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি-বুলবুলসহ আহত অর্ধশতঃ ডাঃ তাহের গ্রেফতার

রাজধানীতে গতকাল জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও পথচারী আহত হয়েছেন।
এ দিকে সন্ধ্যায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

মালিবাগ রেলগেট থেকে গতকাল জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলটি রামপুরার দিকে যাওয়ার সময় চৌধুরী পাড়া আবুল হোটেলের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ দুই দিক থেকে মিছিলের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের পাশপাশি র‌্যাব সদস্যরাও হামলায় অংশ নেন। এ সময় পুলিশ গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আটকে পড়া জামায়াত শিবিরের কয়েক শ’ কর্মী তখন পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে আধা ঘণ্টার বেশি সময় রাস্তায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এ সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশের উপর্যুপরি গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের মুখে জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবির সন্দেহে ২০ জনকে আটক করে। তবে ডিএমপি মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান সাতজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন।

স্কাইপ সংলাপ ফাঁস হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত হয়ে পড়ায় এই ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দেয়া, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথা সংবিধানে পুনঃসংযোজনসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর জামায়াত বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে মিছিলটি বের করে। আগের দিন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃৃতিতে গতকালের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে রামপুরার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু মিছিলটি কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পরই পেছন দিক থেকে রায়টকার নিয়ে পুলিশ মিছিলে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অন্য দিকে চৌধুরী পাড়া আবুল হোটেলের দিক থেকে একই কায়দায় পুলিশ হামলা করে। এতে মিছিলের প্রথম সারিতে থাকা জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হন।

বুলবুল বলেন, বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার মাধ্যমে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে সরকারের অনাকাক্সিত হস্তপে প্রমাণিত হয়েছে। এ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে বিচারপতি নাসিমের পদত্যাগের পর মূলত ট্রাইব্যুনাল গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা হারিয়েছে। বিচারপতি নাসিমের নেতৃত্ব বিচারকার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বাইরের হস্তপে ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। দেশের বাইরে থেকে যেভাবে আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে, বিচারপতি নাসিম তা-ই আদালতে পাঠ করে শুনিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে সরকারের হস্তেেপ এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায়। তাই এই প্রহসনের বিচারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ও আইনগত ভিত্তি নেই। এতে প্রমাণিত হয়েছে সরকার কথিত বিচারের নামে জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তিনি অবৈধ ও বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে অবিলম্বে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

বিােভ মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন ও লস্কর মো: তাসনীম, ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য ড. রেজাউল করিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: ফখরুদ্দীন মানিক, শিবিরের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান, সাহিত্য সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম, প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহইয়াহ ও ঢাকা মহানগরী পূর্ব সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রানা প্রমুখ।

ডা: তাহের গ্রেফতার : এ দিকে সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ সালে একবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ডা: তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নিন্দা : রাজধানীতে জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ডা: তাহেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জামায়াতের পূর্বঘোষিত বিােভ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দিয়েছে। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে সরকারের স্বৈরাচারী চেহারাই জাতির সামনে প্রকাশিত হয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে গ্রেফতার করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপর এক বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে গ্রেফতার করেছে। এভাবে নেতাদের গ্রেফতার করে জনগণের আন্দোলন দমন করা যাবে না। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি প্রদান করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: দেলাওয়ার হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলা এবং ডা: তাহেরকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিবৃতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

জামায়াত নেতা ডা: তাহের গ্রেফতারে কুমিল্লায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল, গাড়ি ভাঙচুর

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় গত রাতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। নগরীর লাকসাম সড়কে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রাইভেটকার, মাইক্রো, সিএনজি অটোরিকশাসহ কমপক্ষে সাত-আটটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, সম্ভাব্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী বিদেশবিষয়ক সম্পাদক ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম, ধোড়করা, কনকাপৈত, আমজাদের বাজার, একতা বাজার, মুন্সিরহাট, দেড়কোটা ও খিরনশাল বাজারে বিােভ মিছিল করেছেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারে অনুষ্ঠিত মিছিলে নেতৃত্ব দেন জামায়াতের উপজেলা অফিস সম্পাদক জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী, শিবিরের উপজেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম মানিক, পৌর সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ। পরে এক সংপ্তি সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডা: তাহেরসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আটক করে হয়রানি করছে। জনবিচ্ছিন্ন সরকার তাদের অবস্থা বুঝতে পেরে এমন আচরণ চালাচ্ছে। অবিলম্বে ডা: তাহেরসহ নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করাসহ তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি করেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.