পাঠকের মন্তব্য- ‘ছাত্রলীগের গায়ে সরকারি তেল মাখানো’

অনলাইনে প্রথম আলো (prothom-alo.com) পড়া হয় ১৯০টি দেশ থেকে। পাঠকেরা প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো। ‘আমি বাংলাদেশেই থাকব’ স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে দেশে ফিরে আসা অধ্যাপক মাহবুব মজুমদারকে নিয়ে ‘আমিই বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন আব্দুল কাইয়ুম। বিষয়টি ছিল প্রথম আলোর সবচেয়ে আলোচিত প্রতিবেদন। পাঠক শফিকুর রহমান লিখেছেন: আমাদের দেশে মেধার অভাব নেই, কিন্তু পরিবেশের কারণে মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। কত দিন হলো মালয়েশিয়া উন্নত বিশ্বে নিজেকে স্থান করে নিয়েছে? যদিও অপ্রাসঙ্গিক, তবু বলতে হয়, আমাদের দেশ থেকে কৃষিশ্রমিক নিয়ে, কৃষিকাজ করে মালয়েশিয়া নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। অথচ আমাদের মাটি কত উর্বর, আমাদের কৃষক কত পরিশ্রমী, কিন্তু আমরা পারছি না। আসল কথা, আমাদের মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এবং নিজ উদ্যোগে কেউ কিছু করতে চাইলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনগুলো মনে আশা জাগায় যে আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।
আবদুল্লাহ আল মামুন লিখেছেন: অভিনন্দন মাহবুব স্যারকে। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। বিদেশে উন্নত কাজের সুযোগ পাওয়ার পরও নিজের দেশের জন্য বা দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য দেশে থাকার মতো ঘটনা একেবারে বিরল। বিরল ঘটনার বিরল মানুষটি বিশ্ব থেকে আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন সম্মান। সরকারের উচিত হবে তাঁকে যথার্থ মূল্যায়ন করা। না হলে আগামীতে মাহবুব স্যারের মতো গুণী লোকদের বিদেশে পাড়ি দিতে হতে পারে।
আজাদ আবুল কালাম লিখেছেন: বাংলাদেশে কি মেধার অভাব আছে? মোটেই না। অভাবটা হলো মেধার পরিচর্যা ও প্রতিপালনের উপযুক্ত পরিবেশের। এখানে মেধাকে পৃষ্ঠপোষকতা দানের চেয়ে কীভাবে ল্যাং মারা যায়, সেটার চর্চা হয় বেশি। মেধার চেয়ে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, মামা-খালুর পরিচয় আর টাকার জোর এখানে মূল নির্ধারক। এই পরিবেশের যদি কিছুটাও পরিবর্তন হয় এবং নিজেদের মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ আছে বলে ন্যূনতম নিশ্চয়তাও যদি পাওয়া যায়, তা হলে মাহবুব মজুমদারের মতো অনেকেই দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত হবেন।

কার স্বার্থে রূপপুর পরমাণু প্রকল্প?
পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ঝুঁকি ও অন্যান্য দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পিটার কাস্টার্স। তাঁর এই লেখা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জাকির (জাপান) লিখেছেন: আমার মতে, বাংলাদেশে পারমাণবিক প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে একটু বেশি করে চিন্তা করা উচিত। কারণ, জাপানের মতো উন্নত রাষ্ট্র কারিগরি দক্ষতা ও পারমাণবিক প্রকল্প দেখভালের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ফুকুশিমার পারমাণবিক বিপর্যয় রোধ করতে পারেনি।
মান্না: আমি প্রথম যখন জানতে পারি, সরকার পারমাণবিক রিয়াক্টর নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার জন্য কাজ করছে, তখনই বলেছিলাম যে বাংলাদেশের জন্য একমাত্র সৌরবিদ্যুৎই উপযুক্ত, যা পরিবেশবান্ধব। এর বাইরে আমাদের এখন যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সরকার খুব ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলে জনগণের জন্য ভালো হয়। এর জন্য আবার না জনগণকে আন্দোলন করতে হয়।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু হত্যা
ছাত্রলীগের নেতাদের ধরছে না পুলিশ
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় শিশু রাব্বি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুলিশ ধরছে না। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিপ্লব রায় লিখেছেন: ছাত্রলীগের গায়ে সরকারি তেল মাখানো। তাই তাদের পুলিশ ধরতে পারে না। এর মধ্যে কিছু ওপরের নির্দেশ, কিছু সরকারদলীয়দের স্থানীয় প্রভাব, কিছু সরকারপক্ষের পুলিশের তোষামোদি। এসব কারণে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় দোষী সরকারদলীয় ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। তাই শুধু পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কিছু বলতে গেলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বয়ান জাতির সামনে তুলে ধরবেন। তখন খুব কষ্ট হয়।
মো. শাহ আলম: ছাত্রদের হাতে লাঠি, হকিস্টিক, দা—কী সুন্দর মানিয়ে গেছে! কেন তাদের হাতে বেমানান বই, খাতা, কলম থাকবে? যেটা বেশি মানায়, সেটাই তো মানানসই! শুধু মানায় না, নামটা ছাত্রলীগ কেন? নামটা থেকে ছাত্র শব্দটা বাদ দেওয়া হোক। আর তাদের আচরণের সঙ্গে মানানসই কোনো শব্দ জুড়ে দেওয়া হোক। আমাদের অন্তত মানসিক শান্তিতে থাকতে দিন।

বিশ্বব্যাংকের জন্য জানুয়ারির পর আর অপেক্ষা নয়
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর সরকারের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে মাহতাব হোসেন লিখেছেন: পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে—এটা বিশ্বব্যাংক আমাদের সরকারকে জানিয়েই ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল। তারা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণও দিয়েছে। এখানে বিশ্বব্যাংকের তরফে আমাদের দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে যা বলা হয়েছে, তা বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আজহারুল ইসলাম: আপনার সাহসী ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আপনি দেশের কথা ভাবেন, কিন্তু আপনার মন্ত্রিপরিষদ সেভাবে কাজ করে কি? পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করা অবশ্যই সম্ভব, যদি সরকারের যেকোনো একটি খাতকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায়। আমরা চাই স্বনির্ভর হতে।

হাতিরঝিল বাড়িয়ে দিয়েছে স্পর্ধা
‘অরণ্যে রোদন’ কলামে আনিসুল হক রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে লিখেছেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাঠক মনজুর লিখেছেন: এমনি করে আমাদের বেসামরিক জনবল ও সামরিক বাহিনীর কর্মদক্ষতায় একদিন বুড়িগঙ্গার সদরঘাট এলাকাও আলোয় ঝলমল করে উঠবে! হাতিরঝিল প্রকল্পের অসাধারণ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আশা করি সরকার শক্ত হাতে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তবে একে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে জনগণকেই সচেতন হতে হবে।
রনজু খান: আমি অস্ট্রেলিয়া দেখিনি, সাংহাই দেখিনি; কিন্তু হাতিরঝিল দেখেছি। এক কথায় অসাধারণ। রাতের বেলায় হাতিরঝিল যে রূপ ধারণ করে, তা যাঁরা দেখেননি, তাঁদের কী করে বোঝাব? আমি আর আমার এক বন্ধু গত শুক্রবার গিয়েছিলাম হাতিরঝিল দেখতে। অনেক আলাপ করলাম বাংলাদেশ নিয়ে, আমাদের প্রিয় ঢাকা নিয়ে। আসলে মূল কথা একটাই, আমাদের রাজনীতিবিদেরা ৫০ শতাংশ সৎ হলেও বাংলাদেশের ইউরোপ বা আমেরিকা হতে ৫-১০ বছরের বেশি লাগার কথা নয়।
সাইদুর রহমান: নগরের প্রতি নাগরিকের দরদ গড়ে তোলার জন্য সেই নগরে সুশোভিত স্থাপনা, প্রকৃতি, বিনোদনের স্থান ইত্যাদির উপস্থিতি দরকার। একসময় গ্রামে শান্তি ছিল, তখন মানুষ গ্রামে ছোটার কথা বলত। কিন্তু এখন হানাহানি, কুৎসা আর নোংরা রাজনীতির কারণে মানুষ গ্রামে থাকতে চায় না। অন্যদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর অব্যবস্থাপনার কারণে শহরেও মানুষ অস্বস্তিতে থাকে। হাজারো মানুষ এ দেশে বাস করার আশা বাদ দিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। এ দেশের খাল-বিল, নদী-প্রকৃতি হারিয়ে যাওয়ায় আর অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা দুর্বার হয়ে ওঠায় এ দেশে সমীহ করার মতো কিছু থাকছে না।
হাতিরঝিল প্রকল্প মানুষকে স্বস্তি দেবে। কারণ, মানুষ নির্মল পরিবেশে নির্বিঘ্নে সেখানে কিছুটা সময় কাটাতে পারবে। ঢাকা শহরের অনেক নদী-নালা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এবং এখনো চোখের সামনে হচ্ছেই। ঢাকার চারপাশের চারটি নদী একে পৃথিবীর মধ্যে অনন্য শহরের স্থান দিয়েছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো এই নদীগুলোকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে পারলে এবং সেখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারলে মানুষ সিডনি, সিঙ্গাপুর, দুবাই, কুয়ালালামপুর, লন্ডনে না গিয়ে এই নদীগুলো দেখে বেড়াত, প্রাণ জুড়াত।

(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.