নতুন সূচক দিয়ে ভূল শুদ্ধ করছে ডিএসই by হামিদ সরকার

দীর্ঘ দিন ভুলের মধ্যে চলেছে দেশের শেয়ারবাজারের কার্যক্রম। আর সেই ভুল শুদ্ধ করিয়ে এখন নতুন সূচক আজ সোমবার থেকে ডিএসই চালু করতে যাচ্ছে।
স্পর্শকাতর ও মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে জড়িত এই বাজারের সূচক বছরের পর বছর ভুল গণনা করে লেনদেন করা হয়েছে। এই ভুলভাবে বাজার পরিচালনার দায়ভার কে নেবে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সেটা কে পুষিয়ে দেবেÑ এমনটাই এখন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান ডিএসইর সূচক ভুলভাবে গণনা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সূচক পরিবর্তনের মতামত দেয়ার দুই বছর পর পুঁজিবাজার কর্তৃপ তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ দুই বছর সময় পার করেছে। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ বৈঠকে সোমবার থেকে নতুন পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন সূচকের একটি হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত সূচক, যার নাম হচ্ছে ডিএসইএক্স। অন্যটি হবে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির সমন্বয়ে সূচক, যার নাম হবে ডিএস-৩০। বর্তমানে ডিএসইতে তিন ধরনের সূচক চালু রয়েছে। এগুলো হলোÑ ডিএসই সাধারণ সূচক (ডিজিইএন), সবশেয়ার সূচক (ডিএসআই) এবং বাছাইকৃত শেয়ার সূচক (ডিএস২০)।

বর্তমান এই পদ্ধতিতে সূচক ভুলভাবে গণনা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত জানালে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে লেনদেনযোগ্য শেয়ারের (ফ্রি ফোট) ভিত্তিতে সূচক গণনার সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর শুধু ফ্রি ফোটের হিসাব ধরে সঠিকভাবে সূচক গণনার পদ্ধতি ঠিক করতে গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর-এর (এসঅ্যান্ডপি) সাথে চুক্তি করে ডিএসই। আর গত ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ডিএসইতে এসঅ্যান্ডপি প্রণীত পদ্ধতি পরীামূলকভাবে চালানো শুরু হয়।

নতুনভাবে তৈরি করা ডিএস৩০ সূচকে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলো হলোÑ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ইউনাইডেট কমার্শিয়াল ব্যাংক, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড ওয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, যমুনা অয়েল, বিএসআরএম স্টিলস, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড, আরএন স্পিনিং, ঢাকা ইলেকট্রিকক সাপ্লাই কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আফতাব অটোমোবাইলস, স্কয়ার  টেক্সটাইল, খুলনা পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এমজেএল, পিপলস লিজিং ও কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেড।

অন্য দিকে দেশের অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সিএসই৩০ ইনডেক্স পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে রোববার থেকে। নতুন সূচকের কোম্পানিগুলো হলোÑ স্কয়ার টেক্সটাইল, অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস,  কেয়া কসমেটিকস, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট, আফতাব অটোমোবাইলস, সিঙ্গার বাংলাদেশ, এপেক্স ট্যানারি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল, তিতাস গ্যাস, উত্তরা ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, উত্তরা ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বে-লিজিং, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো লিমিটেড, জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ। আগের ৩০ ইনডেক্স থেকে আটটি কোম্পানি বাদ পড়েছে। আর কোম্পাগুলো হলোÑ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, নাভানা সিএনজি, সামিট অ্যালাইন্সপোর্ট, আইএফআইসি ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

ডিএসইর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সূচকের সাথে নতুন সূচকের ব্যবধান যেন বেশি না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ভিত্তি ধরা হচ্ছে। আর ডিএস৩০-এর ভিত্তি হবে এক হাজার পয়েন্ট ধরা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ডিএসআই শুরু হয়েছিল ৩৫০ ভিত্তি থেকে। আর ২০০১ সালের নভেম্বরে ডিজিইএন ৮১৭ পয়েন্ট এবং ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিএস২০ শুরু হয়েছিল ১০০০ ভিত্তি থেকে।

No comments

Powered by Blogger.