ইয়াবার উৎস সন্ধানে by আজাদ সুলায়মান

বিশ্বাস করুন আর নাই করুনÑ তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে প্রিয় নেশার উপাদান ইয়াবার উদ্ভাবক দুনিয়াকাঁপানো শাসক হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর সৈন্যদের চাঙ্গা রাখতে তিনি উদ্ভাবন করেন ইয়াবা। যে কারণে ইয়াবার আদি উৎপত্তিস্থল বলা হয় জার্মানিকে।


জার্মানি থেকেই পরে তা গত পাঁচ দশকে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপসহ এশিয়ার কয়েকটা দেশে। তবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডে সবার আগে ইয়াবা তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয়তা পায় আশির দশকের শুরুতে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে। এখন যে ইয়াবায় দেশ সয়লাব তা আসছে মিয়ানমার থেকে। তবে এর মান হিটলার উদ্ভাবিত ইয়াবার মতো নয়। মাদকদ্রব্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল কবির এ প্রতিনিধির কাছে এসব তথ্য দেন।
বিমানবন্দরে আটক ২৬ কেজি সিউডোএফিড্রিন উদ্ধারের নেপথ্য কাহিনী তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগ থেকে জানা যায়, ইয়াবা তৈরির আদি ইতিহাস ও বর্তমান দিনকাল। নাজমুল কবির জানান, এখন রাজধানীসহ সারাদেশে যে ধরনের ইয়াবা তরুণ প্রজন্ম সেবন করছে সেগুলোর গুণগতমান খুব উন্নত নয়। এগুলো আসে মিয়ানমার থেকে। নিম্ন মানের এসব ইয়াবা তৈরিই করা হয় শুধু বাংলাদেশের জন্য। ঢাকায় ব্যবহৃত ইয়াবাতে যেসব উপাদান পাওয়া গেছে তা হিটলারের তৈরি ইয়াবার মতো নয়Ñ বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
হিটলার কখন কিভাবে ইয়াবা তৈরি করেন জানতে চাইলে নাজমুল কবির বলেন, এটা হয়ত এ প্রজন্মের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। অথচ নির্মম সত্য হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার পূর্ব ইউরোপে দলে দলে সৈন্য পাঠান। তখন খবর আসে প্রয়োজনীয় খাবার রসদের অভাবে সৈন্যরা শারীরিক-মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করেছে। হিটলার তখন চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি এ সময় খাবারের বিকল্প উপাদান উদ্ভাবন ও সৈন্যদের শারীরিক-মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার ওষুধ বের করার নির্দেশ দেন। এর পর তিনি জার্মানির তৎকালীন সেরা ড্রাগিস্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তাঁরাই তখন ম্যাথাএপিড্রিন নামক একটি ট্যাবলেট তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে ইয়াবা হিসেবে ব্রান্ডিং করা হয়। হিটলারের নির্দেশে ইয়াবা তখন পাঠানো হয় পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন সৈন্যদের কাছে। তাঁরা ইয়াবা সেবনের মুহূর্তেই কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কিন্তু পরেই আবার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ সৈন্যরা যত দ্রুত চাঙ্গা হয় তত দ্রুতই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এতে হিতেবিপরীত অবস্থা দেখা দিলে হিটলার ইয়াবা উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার সেকেন্ড ইন কমান্ড গোপনে ইয়াবা তৈরির সমস্ত কাঁচামাল ও উপাদান অন্যত্র সরিয়ে নেন। এবং পরে জার্মানিসহ গোটা ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
হিটলার ইয়াবা তৈরিতে কী ধরনের উপকরণ ব্যবহার করেছিলেন জানতে চাইলে নাজমুল কবির বলেন, সিউডোএফিড্রিন ছিল প্রধান উপকরণ। তার সঙ্গে মেশানো হতোÑ বেনজিন, ফৈয়ন, এ্যাসিটোন, ক্লুরোফন, হোয়াইট ক্যাসোলিন, ফিনাইল এ্যাসিটোন, আয়োডিন, ব্যাটারির এ্যাসিড, ইথার, পেইন্ট থিনার, মিউরাইটিক এ্যাসিড ও ফিনাইল টু প্রোপেন। এসব উপকরণের সবই কিন্তু মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য নয়। সিউডোএফিড্রিন, এ্যাসিটোন ও ফিনাইল টু প্রোপেন হচ্ছে মাদকজাতীয় উপকরণ। একটা উপকরণ ব্যবহার ও ব্যবসা করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অনুমতি আবশ্যক।
জানা যায়, হিটলারের ইয়াবায় এসব উপকরণ ব্যবহার করা হতো বলেই সেগুলোর গুণগতমান ও নেশার কার্যকারিতাও ছিল বেশি। মোটকথা, সেগুলো ছিল আদর্শ ইয়াবা। কিন্তু এখন ঢাকায় যে ইয়াবা পাওয়া যায় সেগুলোতে শুধু সিউডোএফিড্রিন উপকরণ পাওয়া যায়। যেটা গত শনিবার শাহজালাল বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিউডোএফিড্রিন ব্যবহার করেই কফের সিরাপ ব্যবহার করে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.