জারদারির দুর্নীতির মামলা-সুইজারল্যান্ডকে লেখা চিঠি প্রত্যাহার করছে পাকিস্তান

প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বন্ধে সুইজারল্যান্ড সরকারকে পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ। আইনমন্ত্রীকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশরাফ গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টকে এ কথা জানিয়েছেন।


পাকিস্তান সরকার জারদারির মামলাগুলো বন্ধের জন্য সুইজারল্যান্ডে চিঠি পাঠিয়েছিল ২০০৭ সালের শেষের দিকে। এখন ওই চিঠি প্রত্যাহার হলে মামলাগুলো শুরু করা বা না করার বিষয়টি সুইস সরকারের হাতে রয়ে যাবে। এর মধ্যদিয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আড়াই বছরেরও বেশি সময়ের দ্বন্দ্ব অবসানের প্রত্যাশা সৃষ্টি হলো।
সুপ্রিম কোর্ট জারদারির দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করা-সংক্রান্ত শুনানি আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন। একই সঙ্গে আগামী শুনানির দিন ২০০৭ সালের চিঠি প্রত্যাহার-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক চিঠির খসড়া আদালতে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে গতকাল জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চালু-সংক্রান্ত শুনানি হয়। প্রধানমন্ত্রী আশরাফ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি শুনানিতে উপস্থিত হন। জারদারির বিরদ্ধে চিঠি পাঠাতে রাজি না হওয়ায় গত জুনে গিলানিকে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্য পদে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আশরাফ প্রধানমন্ত্রীর পদে আসার পর তাঁকেও সরকার প্রধান হিসেবে জারদারির মামলা চালু-সংক্রান্ত চিঠি লেখার ব্যাপারে অবস্থান জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী আশরাফ গতকাল আদালতে জানান, ২০০৭ সালের শেষের দিকে জারদারির দুর্নীতির মামলাগুলো বন্ধ করতে সুইজারল্যান্ডে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মালিক কাইয়ুম। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ঘোষিত জাতীয় দায়মুক্তি অধ্যাদেশ (এনআরও) কার্যকর হওয়ার পরই তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন। অধ্যাদেশটির সুবিধা পান জারদারি, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় আট হাজার লোক। আশরাফ জানান, ওই চিঠি প্রত্যাহার করে নিতে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ফারুক নায়েককে নির্দেশ দিয়েছেন আশরাফ। কাইয়ুমের লেখা চিঠি প্রত্যাহার করা হলে জারদারির বিরুদ্ধে মামলা চালু করা-না করার দায় শুধু সুইজারল্যান্ড সরকারের ওপরই বর্তাবে।
বিচারপতি খোসা মামলাটি চালু-সংক্রান্ত অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী আশরাফের উদ্যোগকে 'গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে আগের চিঠিটি প্রত্যাহার-সংক্রান্ত নতুন চিঠির খসড়া আগে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। খোসা বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুরোপুরি মেনে নেওয়া হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার। চিঠির খসরা তৈরি হওয়ার পর তা অবশ্যই আদালতে দাখিল করতে হবে।' আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চিঠির খসরা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে অর্থপাচার-সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা চালু নিয়ে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দ্বন্দ্ব চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জারদারির মামলা বন্ধ-সংক্রান্ত চিঠি প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী আশরাফ যদি বিচারকদের সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাহলে সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের টানাপড়েন শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.