আবারও বিশ্বসেরা হবে ব্রাজিল ॥ রোনাল্ডিনহো by বিউটি পারভীন

রোনাল্ডো ডি এ্যাসিস মোরেইরা। এই ফুটবলার ২০০৪ ও ২০০৫ সালে টানা দু’বার ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ লাভ করেছেন ২০০২ সালে। আর বার্সিলোনায় খেলার সময় ২০০৬ সালে স্বাদ পেয়েছেন ইউরোপ সেরা ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ট্রফি।


বিশ্বের সকল ফুটবলারের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর আরাধনার দল স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার জার্সি গায়ে চড়ানোর। তবে ২০০৩ সালে বার্সায় যোগ দিলেও ২০০৫ সালে নতুন করে ৯ বছরের দীর্ঘ চুক্তিতে ভিড়েছিলেন কাতালান শিবিরে। কিন্তু ২০০৮ সালে আর ভাল লাগল না। স্বাদ পরিবর্তনের জন্য গেলেন ইতালীয় ক্লাব এসি মিলানে। এরপর থেকেই যেন হারিয়ে গেলেন ব্রাজিলিয়ান এ ফরোয়ার্ড। দীর্ঘ নামটি শুনে হয়ত অনেকেই চিনতে পারেননি পায়ের শৈল্পিকতা দেখিয়ে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও ক্যারিশমা দেখানোয় সত্যই এক জাদুকর, ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘকায় রোনাল্ডিনহো। ২০১০ বিশ্বকাপে কার্লোস ডুঙ্গার বিশ্বকাপ দলেও ডাক পাননি বর্তমানে ৩২ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ফুটবলভক্তের নানা প্রশ্নের জবাবে এসব ছাড়াও জানিয়েছেন নিজের অজানা অনেক তথ্যই। পাঠকদের জন্য তারই সারমর্ম তুলে ধরা হলো-
** পোষা কুকুরের সঙ্গে ফুটবল অনুশীলন করেই খেলাটি রপ্ত করেছেনÑ এটা কতখানি সত্য?
* এটা সম্পূর্ণই সত্য। আমার পোষা কুকুরের সঙ্গে ড্রিবলিং করতাম। বিশেষ করে আমি যাঁদের সঙ্গে অনুশীলন করতাম তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে পোষা কুকুরের সঙ্গে খেলতাম। সে খুব দ্রুত বলের পেছনে ছুটত এবং ক্লান্ত হতো না। আমার অনুশীলনও ভাল হতো।
** ছেলেবেলায় একটি ম্যাচে একাই ২৩ গোল করেছিলেনÑ এটা কি সত্য?
* হ্যাঁ সত্য। তখন আমি ১৩-১৪ বছরের বালক। এক স্কুল টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষ এতই দুর্বল ছিল যে আমি অত গোল করতে পেরেছিলাম।
** ১৯৯৯ সালের কোপা আসর ফুটবলার হিসেবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রেখেছে?
* এটা বিশ্ববাসীর সামনে আমাকে পরিচিত করে তুলেছে এবং পরবর্তী ক্যারিয়ার গঠনের জন্য একটা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সেবার দলের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটি গোল করি এবং নানা সময়ে অনেক ভক্তই ওই গোলটির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। আর ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও ওই গোলটির পর আমাকে অন্য চোখে দেখা শুরু করেন।
** ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয় নাকি ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় কোন্টি বিশেষ অর্জন মনে করেন?
* দুটোই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাব পর্যায়ে যদি বিবেচনা করা হয় সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন। কিন্তু জাতীয় দলের অর্জনের দিক থেকে বিশ্বকাপের চেয়ে বড় কিছুই নেই। আমি যৌথভাবে দুটিকেই নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেতাব বলে মনে করি।
** বার্সায় আপনি লিওনেল মেসিকে দেখেছেন। আপনি কি ভেবেছিলেন তিনি এমন বিস্ময় সৃষ্টি করবেন?
* তিনি আসলে অন্য এক রকমের মেধা নিয়ে জন্মেছেন এবং ছোট থাকতেই সেটার সদ্ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন। যখন বার্সার হয়ে খেলতে নেমেছেন তখন তিনি পরিণত এবং প্রস্তুত হয়েই নেমেছেন। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে সে প্রথম গোলটি করেছিল আমার দেয়া পাস থেকেÑ এটা ভাবতে এখন ভাল লাগে। এছাড়া বর্তমানে সে যা কিছু অর্জন করছে সেটা আমাকে পুলকিত করে। আমি বার্সায় আসার পরই সবাই বলাবলি করছিল এক তরুণ আছে যার ফুটবলশৈলী বিস্ময়কর। এরপর সে দলের হয়ে খেলা শুরুর পর সবাই যা বলেছে সেটার প্রমাণ দিতে শুরু করেছে।
** বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বার্নাব্যুতে দুর্দান্ত একটি গোল করেছিলেন। বিস্ময়কর ওই গোলটির জন্য রিয়াল সমর্থকরাও দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিল আপনাকে। ভাবতে কেমন লাগে?
* অসাধারণ একটি অনুভূতি। তবে গোলটি যখন করেছি (নবেম্বর, ২০০৫) তখন কিন্তু রিয়ালের সমর্থকরা আমাকে অভিনন্দিত করেনি। তবে ম্যাচ শেষে অবাক হয়ে দেখলাম তাঁরা সবাই দাঁড়িয়ে আমাকে করতালি দিচ্ছেন। তাঁরা মূলত টিভিতে রিপ্লে দেখেই ওটা করেছেন। আমার মনে হয় খুব কম ফুটবলারেরই গোল করার পর প্রতিপক্ষ সমর্থকদের কাছে প্রশংসা পাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
** গোল করার পর আপনাকে বিশেষ একটি নৃত্য করে উদ্যাপন করতে দেখা গেছে। আপনি কি ওই নাচটিরও অনুশীলন করেন?
* আমি মাঝে মাঝেই ওটা করে থাকি। আর আমরা একসঙ্গেই এটা অনুশীলন করি। কিন্তু ইউরোপিয়ানরা সাম্বার প্রতি আগ্রহী নয়। কিন্তু আমি গোল করার পর বিশেষ একটি নৃত্য দেখাতে পছন্দ করি। ব্রাজিলিয়ানরা ওই নাচটির মাহাত্ম্য বোঝেন কিন্তু ইউরোপিয়ানদের জন্য এটা দুর্বোধ্য।
* ৯ বছরের চুক্তি সত্ত্বেও কি কারণে আপনি বার্সা ছেড়ে দিলেন? ২০১৪ সাল পযন্ত থাকতে পারতেন।
** ততদিনে আমি ৫ বছর বার্সার হয়ে খেলে ফেলেছি। কিন্তু ইতালিয়ানরা কিভাবে ফুটবল চর্চা করে ওই স্বাদ যেমন নিতে চেয়েছিলাম, তেমনি নতুন অভিজ্ঞতাও অর্জনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমার কাছে বিশ্বের সেরা দল বার্সা। বহু বছর ধরেই তারা সেটার প্রমাণ দিয়েছে।
** প্রথমবারের মতো ইউটিউবের একটি ফুটবল ভিডিও ১০ লাখ দর্শক দেখেছেন। আর সেটি ছিল আপনার আশ্চর্য বল নিয়ন্ত্রণ কৌশল। এটা কতটা বাস্তব ছিল? আপনার মতে একজন ডিফেন্ডারকে কাটানোর সবচেয়ে সন্তোষজনক কৌশল কোন্টি?
* ওই ভিডিওটিতে অনেক মন্তব্য পড়েছিল এবং অধিকাংশই প্রশ্ন করেছিলেন ওটা কতখানি সত্য। কিন্তু আমি মানুষকে বোঝাতে বোঝাতে প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম ওটা একটি সত্য দক্ষতার ভিডিও ছিল। আর যে ড্রিবলিং একজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে পারে সবই সন্তোষজনক কৌশল বলে মনে করি।
** আপনি একডজনের বেশি ব্যক্তিগত পুরস্কার পেয়েছেন। কোন্টি আপনার কাছে বিশেষ কিছু?
* আমি সবই মায়ের বাড়িতে রেখে দিয়েছি। আর সবই আমি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে মনে করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের স্বীকৃতি এবং মর্যাদা। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় মনে হয় ২০০৫ সালে ফিফা বর্ষসেরা হওয়ার পুরস্কারটি।
** আপনি কি আবারও ব্রাজিল দলে কিংবা ইউরোপীয় ফুটবলে ফেরার প্রত্যাশা করেন?
* আমি সবসময়ই চেয়েছি ব্রাজিল দলে ফিরতে। আর বর্তমানে আমি দেশে ফিরেছি কারণ খুব ছোট থাকতে আমি ব্রাজিল ছেড়ে গিয়েছিলাম। ফুটবলের ছন্দ, কৌশল, স্বকীয়তা সবকিছুই ইউরোপে অন্যরকম। ব্রাজিলে ফুটবল অনেক বেশি কৌশলগত এবং ছন্দোবদ্ধ। কিন্তু বাইরে অনেক বেশি পরিমাণে শারীরিক শক্তির খেলা হয়। তবে আমি সবসময়ই ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখি। আমি মনে করি এখনও যথেষ্ট সময় আছে সেখানে ফেরার।
** আগের মতো বিশ্বসেরা দল নেই ব্রাজিল। আপনার কি মনে হয় স্বরূপে ফিরতে পারবে ব্রাজিল?
* আমার মনে হয় এমনটা হয়েছে গত বিশ্বকাপের কারণে। ব্রাজিল একদমই ভাল খেলেনি এবং যেভাবে খেলেছে কখনই সেটা ব্রাজিলের খেলার ধরন নয়। ওই সময়কার ম্যানেজার (ডুঙ্গা) খেলার কৌশলের দিকে মনোযোগ না দিয়ে শুধু প্রতিপক্ষ ফুটবলারের দিকে সজাগ থেকে তাঁকে আটকে রাখার প্রবণতা দেখিয়েছেন। এ কারণে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন ব্রাজিল আর কখনই সুন্দর, নিপুণ ফুটবল খেলতে পারবে না। কিন্তু আমি মনে করি আবারও পুরনো রূপে ফেরার সমস্ত রসদই ব্রাজিলের আছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের মধ্যেই আপনারা সেটা দেখতে পাবেন। সবাই এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তরুণরাও সেভাবেই ফুটবল চর্চা করে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.