প্রতিজ্ঞা নিউজিল্যান্ড বধের by নোমান মোহাম্মদ

সমুদ্রতটের কলম্বো থেকে পাহাড়চূড়ার ক্যান্ডি। লঙ্কাদ্বীপের রাজধানীতে সারাক্ষণ ছিল গুমোট ভাপসা আর্দ্রতা। বাতাসের সঙ্গে নারিকেলশাখার নিরন্তর ঝগড়াও পারেনি তা কমাতে। ক্যান্ডির পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সবুজ বনানীতে নেই হাওয়ার তেমন আন্দোলন। তবুও কী স্নিগ্ধতা! বুদ্ধের ধ্যানী মূর্তির মতোই শীতল পরশ মাখানো!


প্রকৃতি উপভোগের সময় অবশ্য নেই বাংলাদেশের। টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানই এখন তাদের কাছে 'পাখির চোখ'। পরশু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ সেরে মাঠ থেকেই সড়কপথে ক্যান্ডিতে এসে পেঁৗছেছে দল। কাল ছিল বিশ্রাম। কোনো অনুশীলন নয়, কেবল যাঁর যাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী শারীরিক ব্যায়াম। আয়েশি ভঙ্গিতে হোটেলে শুয়ে-বসেই সময় কাটিয়েছেন বেশির ভাগ ক্রিকেটার। কেউ কেউ দুলকিচালে ঘুরে এসেছেন শহর। তবে প্রত্যেকের চোখে-মুখে পোস্টারের মতো সেঁটে আছে প্রতিজ্ঞা। ২১ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে একটা কিছু যে করা চাই-ই চাই!
একটা সময় এই 'একটা কিছু' বলতে ছিল ভালো খেলা। কোনো একজনের ফিফটি, কারো হয়তো দু-তিন উইকেট, আর সেটি দিয়ে কিছু হাততালি কুড়ানো। বাংলাদেশের বদলে যাওয়া ক্রিকেট মানচিত্রে ভালো খেলার সংজ্ঞাটা এখন অন্য রকম। জয় ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা নেই। তাই তো পরশু ছুটির দিনে নিশ্চিন্তে ঘুরে ফেরার ফাঁকেও দূর দিগন্তে ওই জয়সূর্য দেখছে বাংলাদেশ!
নিউজিল্যান্ড না পাকিস্তান- জয়ের সম্ভাবনাটা কোন দলের বিপক্ষে বেশি? ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মহাকাব্যিক সেই জয়ের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কোনো ফরম্যাটেই না! অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডকে তো বছর দুয়েক আগে হোয়াইটওয়াশই করেছিল বাংলার ক্রিকেটসেনারা। আপাতত তাই পরশুর ম্যাচেই সম্ভাবনার পাল্লা ভারী। ক্যান্ডির মায়াভ্যালি রিচ হোটেলের সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়ানো মাশরাফি বিন মর্তুজা ততটা নিশ্চিত নন, 'নিউজিল্যান্ডও কিন্তু খুব শক্তিশালী দল। আর বিশ্বকাপে ওরা সব সময়ই ভালো করে। সেই কারণে তাদের বিপক্ষেও আমাদের কঠিন লড়াই করতে হবে।' সেই লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট নড়াইল এঙ্প্রেস। কাঁটার মতো খচখচ করছে কেবল আয়ারল্যান্ডের কাছে হারটা, 'শ্রীলঙ্কায় এসে প্রস্তুতি ম্যাচের একটা জিতেছি, একটা হেরেছি। তাই বলব ফিফটি-ফিফটি প্রস্তুতি। তবে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে সার্বিক প্রস্তুতি আমাদের খারাপ হয়নি। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে হাতে এখনো দুটো দিন আছে তো! সেই দুটো দিনে বাকি সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে চাইব আমরা।' আর কাটিয়ে উঠে জয়ের এক রেসিপিও দিয়ে দিলেন মাশরাফি, 'সাধারণত দেখা গেছে, যেদিন আমাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড় ভালো খেলে, সেই ম্যাচ আমরা জিতি। যদি দলের ছয়-সাতজন খেলোয়াড় নিজেদের সামর্থ্যের অন্তত শতকরা ৭৫ ভাগ দিতে পারে, তাহলেই হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যদি নিজেদের পরিকল্পনাগুলো সফল করতে পারি, তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।'
বাংলাদেশের সেই ভালো করায় ম্যাচের দিন ছয়-সাতজনের সামর্থ্যের প্রতিফলন মাঠে দেখতে চান মাশরাফি। তবে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা যে সাকিব আল হাসানকেই নিতে হবে, সেটি সবার জানা। কাল হোটেলের লবিতে সোফায় ডুবে থাকা সাকিবকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে পুরো জাতির প্রত্যাশার ভার তাঁর কাঁধে। বাঁহাতি স্পিনে বরাবরের মতোই বিষাক্ত, ব্যাটিংয়ে তিন নম্বরে উঠে এসে আরো শাণিত। ব্যাটিং অর্ডারের এই পজিশন উপভোগ করার উপলক্ষ করছেন তিনি বিশ্বকাপকেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পরই বলেছিলেন তেমনটা, 'যদি টুর্নামেন্টে গিয়ে ভালো কিছু করতে পারি, তাহলেই না বুঝব এটি উপভোগ করছি।' তবে মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে ব্যাটিং অর্ডারের এক, দুই, তিনে পাঠানোয় মিডল অর্ডার ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে কি না, এ প্রশ্নটিও উঠেছে। প্রধান নির্বাচক আকরাম খান সেটিকে আমলেই আনতে চাইছেন না, 'ব্যাটিং অর্ডার কী হবে, সেখানে কোচ আর অধিনায়কের মতামতই মুখ্য। আর আমার ব্যক্তিগত মত, সেরা ক্রিকেটারদের যত ওপরে সম্ভব রাখা দরকার। মাত্র তো ২০ ওভারের খেলা। তাই আপনার সেরা ব্যাটসম্যানকে বসিয়ে রাখার সুযোগই নেই।'
টানা প্রস্তুতি ও ভ্রমণের ধকল সামলাতে বাংলাদেশ দল কাল একরকম বসেই ছিল। আজ থেকে আবার অনুশীলনের দৌড়ঝাঁপ। আর দিন দুয়েক পর 'দ্য ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার'-এর প্রথম সমরযুদ্ধ। হাম্বানটোটায় গতকাল টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাঁশি বেজে গেলেও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ তাই শুরু হবে পরশু। মুত্তিয়া মুরালিধরনের ক্যান্ডি, কুমার সাঙ্গাকারার ক্যান্ডিকে সাকিব-তামিম-আশরাফুলের ক্যান্ডি করে নেওয়ার মিশন সফল হবে তো!

No comments

Powered by Blogger.