ব্যস্ত সময় পার করছেন খুরশিদা by গিয়াস উদ্দিন

১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে কেরোনতলী গ্রামের খুরশিদার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বেশ ভিড়। তাঁকে দেখতে সকাল থেকেই অপেক্ষা করছে বহু মানুষ। একটু আগেই দল নিয়ে বন পাহারা দিয়ে ফিরেছেন। ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই কথা হলো তাঁর সঙ্গে।


‘ভীষণ ব্যস্ত। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটিয়েছি কেরোনতলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুল আমি নিজের হাতে গড়ে তুলেছি। এখানে শিক্ষকতার কাজটিও করি।’ বলেন খুরশিদা বেগম।
‘২০০৪ সালে নিসর্গ সহায়তা (আইপ্যাক) প্রকল্পের সহব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে জড়িত হয়েছি নিজেদের প্রয়োজনে। কারণ, ছেলেমেয়েদের জন্য গ্রামে একটা স্কুল তৈরি জরুরি ছিল। ২০০৬ সালে ওই সহব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় ২৮ জন নারী নিয়ে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য একটি পাহারা দল গঠন করি। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে আমরা বন রক্ষার কাজ করে চলেছি। সফলও হয়েছি। এই কাজ বা দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমাসে সদস্যদের নাশতা-খরচ বাবদ এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। অনেকে বন পাহারার পাশাপাশি স্থানীয় এনজিও শেডের পুষ্টি প্রকল্পে চাকরি করে মাসে দুই হাজার এবং আনন্দ স্কুলে শিক্ষকতা করে এক হাজার ২০০ টাকা বেতন পাচ্ছেন। এসব নিয়ে নারী সদস্যদের সংসার চলছে।’
পুরস্কারের ১৬ লাখ টাকায় কী করবেন? জানতে চাইলে খুরশিদা বলেন, ‘এই টাকার মালিক দলের ২৮ নারী সদস্য। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আমি সভাপতি হিসেবে এই পুরস্কার নিতে যাচ্ছি। রোম থেকে ফিরে দলের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করব। ভালো কাজে টাকাগুলো খরচ করার চেষ্টা করব। সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।’
খুরশিদা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করছি। ভবিষ্যতেও তা-ই করব। আমি সবার খুরশিদা হয়ে থাকতে চাই। টাকাপয়সা আমার কাছে তেমন কিছু নয়। ছেলেদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে ও সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। দুই ছেলেকে মানুষ করতে পারলেই নিজেকে সার্থক মনে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.