ইউপিএ সরকারে না থাকার ঘোষণা মমতার

ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুচরা ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ এবং রান্নার গ্যাসের ওপর থেকে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারসহ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
মমতা। গতকাল মঙ্গলবার কলকাতায় দলের এমপিদের সঙ্গে তিন ঘণ্টা আলোচনার পর তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সরকারে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলেও আসন সংখ্যার বিচারে মনমোহন সিংয়ের সরকারের গদি টলছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯ সংসদ সদস্য দিয়ে তৃণমূল 'আউট' হলেও বিচিত্র রাজনৈতিক চরিত্রের অধিকারী মুলায়ম সিং যাদবের ২২ সংসদ সদস্যের সমাজবাদী পার্টির প্রবেশ ঘটবে কেন্দ্রীয় সরকারে। রেলমন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে তাঁর দলের কোনো নেতাকেই।
মমতা গত ১৫ সেপ্টেম্বর সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, সোমবার রাত পর্যন্ত সরকার ওই সব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে মঙ্গলবার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল রাতে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, 'মানুষের কাছে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, পাঁচ বছরই এই সরকারকে সমর্থন করব। কিন্তু আমরা খুবই দুঃখিত যে এই সরকারের জনবিরোধী নীতির কারণে সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলাম না এবং সেটি অবশ্যই মানুষের ভালোর জন্য।'
মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের একজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং চারজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। আগামী শুক্রবার সরকার থেকে তাঁদের পদত্যাগ করার কথা। মমতা জানান, আগামী শুক্রবার বিকেলে মনমোহন সিংয়ের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে 'সমর্থন' প্রত্যাহার করবে তৃণমূল। তিনি বলেন, 'শুক্রবার জুমার নামাজের পর মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। আর সেই সময় পর্যন্ত অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস গোটা পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখবে।' বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, মমতা এ কথার মাধ্যমে এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধী কিংবা সরকারপ্রধান ড. মনমোহন সিংয়ের পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দিলেন।
গতকালের বৈঠকে তৃণমূলের একাধিক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার না করার জন্য নেত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ও সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতিই সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে নগর উন্নয়নমন্ত্রী সৌগত রায় এবং রাজ্যসভার সংসদ সদস্য কুনাল ঘোষ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি দলীয় নেত্রীকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
৫৫৪ আসনবিশিষ্ট ভারতের লোকসভায় কংগ্রেসের একক আসন সংখ্যা ২০৬। তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া ডিএমকে, এনসিপি এবং নির্দলসহ ৪৮ আসন নিয়ে মোট ২৫৪ আসন রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের। আর সরাসরি অংশ না নিয়ে এই মুহূর্তে মনমোহন সিং সরকারকে সমর্থন করে চলেছেন বহুজন সমাজবাদী পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিএসের মোট ৫৪ জন সংসদ সদস্য। ফলে সরকারে থাকার ক্ষেত্রে নূ্যনতম ২৫৪ আসনের জায়গায় ইউপিএ সরকারের সমর্থন রয়েছে ৩০৬ জন সংসদ সদস্যের। ফলে সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই মনমোহনের, যদি না বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে বিরোধী অবস্থান নেয়।
তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজধানী দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র জনাদন ত্রিবেদী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণার খবর তাঁরাও শুনেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনো আসেনি। মমতাকে এখনো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস।
গতকাল বিকেল ৫টায় কলকাতার টাউন হলে পূর্বনির্ধারিত জরুরি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মমতা। বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়নমন্ত্রী সৌগত রায়সহ লোকসভা ও রাজ্যসভার ২৮ সংসদ সদস্য এবং তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, বিধানসভার উপনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.