প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে ড. মসিউর বললেন-ছুটি চাইনি, বিশ্বব্যাংক গুপ্তচর চক্র পুষছে

বিশ্বব্যাংকের কথিত শেষ শর্ত পূরণ করতে ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। আর ছুটিতে গেলেই সংস্থাটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে, তা-ও মনে করেন না তিনি। ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের একটি 'গুপ্তচর চক্রের' সক্রিয় থাকার কথাও জানান অর্থ উপদেষ্টা।


গতকাল মঙ্গলবার সকালে হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ড. মসিউর। ছুটিতে যাওয়ার খবর সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি খুব স্পষ্ট করে বলছি, ছুটিতে যাওয়ার দরখাস্ত আমি করিনি। আর যিনি (প্রধানমন্ত্রী) ছুটি অনুমোদন করবেন, তিনিও কিছু বলেননি। আমি নিয়মিত অফিসে যাচ্ছি এবং কাজ করছি।'
পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য ড. মসিউর রহমান এক মাসের ছুটি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁর বা তাঁর কোনো সহকারীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে একটি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও ও অনলাইন সংবাদপত্র তাঁর বরাত দিয়ে জানায়, তিনি ছুটিতে যাচ্ছেন না।
গতকাল সাংবাদিকদের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. মসিউর। তিনি বলেন, সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তাই এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।
মসিউর রহমান বলেন, 'আপনারা আমার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন। চারদিকের এমন চাপে যেকোনো লোক হার্ট ফেল করতে পারে। ব্রেনস্ট্রোকও করতে পারে। আপনাদের সহানুভূতি নিয়ে আমি এখনো বেঁচে আছি। সব সময় আপনাদের সহানুভূতি চাই।'
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের সঙ্গে ড. মসিউরের পদত্যাগ বা দীর্ঘ ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করেই কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় আগস্ট মাসের শেষ দিকে। এরপর থেকেই তিনি এসব গণমাধ্যমের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। এ ব্যাপারে সরকার বা বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। তবু সংবাদমাধ্যমের খবর ও মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে ড. মসিউরের বহাল থাকাকে বিশ্বব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তির পথে সর্বশেষ বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হতে থাকে। সরকারি দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায়ও বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এসব কারণে তাঁর ওপর তীব্র স্নায়বিক ও মানসিক চাপ পড়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'ছুটিতে না গেলেও আমাকে নির্বাসনে পাঠানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একসময় রাশিয়ায় যারা অবাঞ্ছিত ছিল, তাদের গুলাগে (বন্দিশিবির) নিয়ে যাওয়া হতো। আমার জীবনটা গুলাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি এখন গুলাগে বসবাস করছি।'
বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর ড. মসিউর জানান, বিশ্বব্যাংকের নিয়োগ করা গুপ্তচররা বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটিকে গোপনে তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছে। এ লোকগুলো দেশের অনেক দুর্নাম রটিয়েছে। এসব গোপন তথ্য সরবরাহকারী ও পরামর্শদাতার নাম প্রকাশ করতে বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ জানানো হলেও তারা তা করেনি। তবে বেনামে পাঠানো কিছু ই-মেইল তাঁর হাতে পেঁৗছেছে। এসব ই-মেইল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেওয়া হয়েছে। গুপ্তচরদের বিষয়টি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
মসিউর বলেন, 'এ মুহূর্তে আমার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গৌণ ও তুচ্ছ। দেশের স্বার্থ অনেক বড়। তাই আমার রক্ত দিলেও যদি সেতু হয়, তাহলে আমি রক্ত দিতে রাজি আছি। আমি ছুটিতে গেলে যদি দেশের সুনাম ফিরে আসে, তাহলে অবশ্যই আমি তা করব।'
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাংক এ পর্যন্ত কোনো চুক্তি অনুমোদন করেনি। প্রাথমিক কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। তাদের দোষ ঢাকতেই এ ধরনের শর্ত দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হলেও বর্তমান সরকারের মেয়াদে সংস্থাটির অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে না।
ড. মসিউর বলেন, 'আমি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। চিঠি চালাচালি করে বিষয়টির সমাধান হলেও বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিশ্বব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। তাই নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা ভালো হবে। এ সেতু নির্মাণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।'

No comments

Powered by Blogger.