ভিটামিন সি ভরপুর ঔষধি ফল তবু হারিয়ে যাচ্ছে- আমলকীর গুণ by মোরসালিন মিজান

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমলকীর গুণের কথা জানে সর্বজন। তবে মনে করিয়ে দেয়া জরুরী যে, ফলটির এখন মৌসুম। দর-দামের কমবেশি থাকলেও সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে গোলাকৃতির রসালো মাংসল ফলটি। বিশেষ করে রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে ঝুরিভর্তি আমলকী নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
হাল্কা সবুজ বা হলুদাভ রঙের এ ফল নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে আপনার। ছোট্ট এ ফলটিতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি। প্রতি ১শ’ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন সির পরিমাণ ৪৬৩ মিলিগ্রাম। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়। আর তাই মাত্র দুটো আমলকী মুখে পুড়ে দিন। দারুণ একটা কাজ হয়ে যাবে!
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণা মতে, ভিটামিন সি ছাড়াও একটি আমলকীতে থাকে ১৬.২ গ্রাম শর্করা, ০.৭ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৩.৪ গ্রাম আঁশ, ৭০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.১ মিলিগ্রাম লৌহ ও ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১। তবে ভিটামিন সির কারণেই বিশেষ কদর আমলকীর। ফলটিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে।
আমলকীর ভেষজ গুণও অনেক। এটি মুখের রুচি বাড়ায়। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এ জন্য আধাচূর্ণ শুষ্ক ৫ থেকে ৬ গ্রাম ফল ১ কাপ পানিতে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন। পরে কচলিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার পানিটুকু পান করুন, হজম শক্তি বাড়বে। পাশাপাশি দূর হবে বমি সমস্যা। ভিটামিন সির অভাবজনিত রোগ সারাতেও কাজ করে আমলকী। পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তশূন্যতা দেখা দিলেও মহৌষধ মনে করতে পারেন একে। লিভার ও জন্ডিস রোগের পথ্য এটি। জানা যায়, দেশীয় ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে আমলকীর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমলকী বেঁটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় দেয়া গেলে ভাল ঘুম হয়। কাঁচা আমলকীর রস চুলে লাগানোর উপকার সম্পর্কে অবশ্য বরাবরই খুব সচেতন শহুরে মেয়েরা। প্রতিদিন এ রস মাথায় দিয়ে দুই-তিন ঘণ্টা রাখা গেলে এবং একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুল পড়া এবং তাড়াতাড়ি চুল পাকা বন্ধ হয়। আমলকীর চিরুনির মতো সাজানো পাতায়ও উপকার আছে। পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক। তবে আমলকীর জেলি ও মোরব্বার কথা না বললেই নয়। এ ফল দিয়ে তৈরি জেলি মোরব্বা অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে থাকে।
আমলকীর ফলটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভাল জন্মে। বীজ শাখা কলম ও জোর কলম থেকে এর বংশবিস্তার করা যায়। এ গাছ ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। ফুল ধরে এপ্রিল মে মাসের দিকে। ফলটি প্রধানত টক স্বাদের হলেও এতে মিষ্টি, লবণ, তেতোসহ আরও পাঁচটি স্বাদ পাওয়া যায়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে ২শ’ কেজির মতো আমলকী পাওয়া যায়।
তবে এত যে গাছের গুণ সে গাছটির সংখ্যা কিন্তু দিন দিন কমছে। এর কারণ সম্পর্কে কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও অনেকে আমলকীর উপকার সম্পর্কে ভাল জানেন না। এ ফল খাওয়া যায় এটিও কারও কারও অজানা। এছাড়া যারা গাছ লাগান তাদের বেশিরভাগই এ থেকে কাঠ পাওয়ার আশা করেন। এসব কারণে আমলকী গাছ কমে যাচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমলকী চাষ হয় বলে জানান তিনি। সেখান থেকেই ঝুড়িভর্তি হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে ভিটামিন সির রাজা। এছাড়া ছাদ বাগানেও ফলটি হচ্ছে বলে জানা যায়। মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, শুধু বর্ষায় নয়, যে কোন সময় আমলকীর চারা লাগানো যায়। উপযুক্ত চারাও পাওয়া যায় সহজেই। লাগানোর জন্য মাটি রসালো করে তৈরি করে নিলেই হয়। সুতরাং চাইলে আজই আপনি নিজেও একটি আমলকীর চারা লাগিয়ে ফেলতে পারেন। নিশ্চিত, এটি পরিবারের সকলের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.