অন্য দাতারা পাশে থাকুন, মুহিতের আহ্বান-বিশ্বব্যাংক সৃষ্ট পরিস্থিতি-এলসি গ্রুপের বৈঠক

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রমের জন্য অন্য দাতাদের কাছে বিচার চাইলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ জন্য অনুষ্ঠিত লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বিশেষ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে দাতাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।


আমন্ত্রণ জানানো হলেও এ বৈঠকে অংশ নেয়নি বিশ্বব্যাংকের কোন প্রতিনিধি। এর কারণ সম্পর্কে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিস থেকে জানানো হয় কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওয়াশিংটনে থাকায় আর কোন প্রতিনিধি অংশ নেননি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জবাবদিহিতার ভয়ে এতে বিশ্বব্যাংক অংশ নেয়নি বলে একাধিক সূত্র মনে করছে।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান নীল ওয়াকার। বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর তেরেসা খো সহ ১৮টি দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দাতাদের সামনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে যে ব্যাখা দেয়া হয়েছিল সেটিই তুলে ধরা হয় দাতাদের সামনে। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে করণীয় সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোন মতামত নেয়া হয়নি। দাতাদের কাছে আমাদের এবং বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রমের বিষয়ে বিবেচনার ভার তুলে দেয়া হয়েছে। এখন তারা বিবেচনা করে মতামত দিতে পারেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন। নীল ওয়াকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তেমন কোন মন্তব্য করেননি। তবে বৈঠকে তিনি যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি তুলে ধরেন বলে জানা গেছে। অন্য দাতারা তেমন কোন মন্তব্য করেননি।
এর আগে গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে এলসিজির বৈঠক। সেখানে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন ইআরডির সিনিয়র সচিব ড. ইকবাল মাহমুদ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন। বর্তমানে মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ্যালেন গোল্ডস্টেইন এলসিজির দায়িত্ব থেকে সরে যান। ওই বৈঠকে তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। এগুলো হলোÑ প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি, বাংলাদেশের ক্রয় প্রক্রিয়া এবং গত এলসিজি বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা। এছাড়া ওই বৈঠকে ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজ করে বৈদেশিক অর্থছাড় দ্রুত করতে এক সঙ্গে কাজ করতে সরকার ও দাতারা সম্মত হয়েছিল।
সূত্র জানায়, কানাডা পুলিশের তদন্ত এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, ঋণ কার্যকারিতার সময়ও রয়েছে ২৭ জুলাই পর্যন্ত, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনও যখন তদন্ত অব্যাহত রেখেছে ঠিক সেই মুহূর্তে গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আকস্মিকভাবে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ খবরে যেন বাজ পড়ে সরকারে মাথায়। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেই ফেলেছেন চুক্তি বাতিলের এ ঘটনা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত।
বিশ্বব্যাংকের চুক্তি বাতিলের দু’দিন পর পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা থেকে সরে গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ওই দিন জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেÑ জাইকা সরছে না। আমাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা আশা করছি চলমান বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার গঠনমূলকভাবে মোকাবেলা করবে। আইডিবি এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।

No comments

Powered by Blogger.