টোকিওতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তে জাইকাপ্রধানের দুঃখ প্রকাশ

ঢাকায় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক এবং দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বৈঠকে আলোচনার বিষয় যখন পদ্মা সেতু, তখন একই ইস্যুতে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আফগানিস্তানবিষয়ক সম্মেলন উপলক্ষে টোকিও সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সোমবার জাপানের


উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোইচিরো জেমবা, জাইকার (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন পদ্মা সেতুর অর্থায়নের বিষয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে জাপানের সহযোগিতাকে বাংলাদেশ উৎসাহিত করবে।
জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখাসহ নতুন কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা বিষয়ে জাইকা জাপানের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তে জাইকার প্রেসিডেন্ট দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বিকেলে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে ওকাদা বলেন, বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি বাতিল করার পর অর্থায়ন বিষয়ে নতুন কাঠামোর আওতায় প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। তিনি আশ্বাস দেন, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাপান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ দাতাগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। তিনি বাংলাদেশে জাপানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির বিষয়টি তুললে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
মন্ত্রণালয় জানায়, টোকিওতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোইচিরো জেমবার সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে আফগানিস্তান সম্মেলন ও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি গুরুত্ব পায় পদ্মা সেতু প্রকল্প। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে এ প্রকল্পে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি প্রকল্পে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরে বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ এ প্রকল্প শুরু করতে প্রস্তুত। তবে জাপানের মতো দেশ এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ তাকে উৎসাহিত করবে।
কোইচিরো জেমবা নিশ্চিত করেন, জাপান সরকার পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করে। তিনি আশ্বাস দেন, জাপান এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় দাতাগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
এদিকে জাইকার প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা হয়। জাইকার মহাপরিচালক নাকাহারা মাসাতাকা, বাংলাদেশে প্রধান প্রতিনিধি তোরা তাকাও, জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইচিগুচি তোমোহিদি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক যথাযথ প্রক্রিয়া যেমন অনুসরণ করেনি, তেমনি দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ দেয়নি।
নিজস্ব উদ্যোগে, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় মনোভাবের প্রশংসা করে জাইকার প্রেসিডেন্ট বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে জাইকা বিষয়টি নিয়ে জাপানের অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
অন্যদিকে গতকাল দুুপুরে জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় গ্রুপের এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানেও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন গুরুত্ব পায়।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদার ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেরি হওয়ার কথা উল্লেখ করে অর্থায়নের ব্যাপারে সহযোগিতা চায়। সে সময় জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জাপান বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের প্রত্যাশা করছে। এত বড় একটি প্রকল্পে জাপান একা অর্থায়ন করতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.