ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বাধাগুলো দূর করুন-বেহাল স্থানীয় সরকার

গত রোববার প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয়ভাবে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্থানীয় সরকারের সব স্তর পুনর্গঠন সম্পর্কে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমরা একমত।


কেননা, টেকসই উন্নয়ন এবং এর সুফল শহর-গ্রামনির্বিশেষে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই।
তবে সত্য যে, প্রধানমন্ত্রীর উপরিউক্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে সরকারের উন্নয়ননীতি ও কাজের মিল খুব একটা নেই। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের সব স্তর পুনর্বিন্যস্ত হলেও ক্ষমতায়িত হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনায়ও তাদের ভূমিকা সীমিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নীতি ও পরিকল্পনা ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের সংবিধানে শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের কথা বলা আছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও একই কথার প্রতিধ্বনি রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে গত ৪১ বছরের অগ্রগতি খুবই সামান্য। বহু বছর পর জেলা পরিষদ সচল হলেও সেগুলো চলছে মনোনীত প্রশাসক দিয়ে। অন্যদিকে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হলেও তাঁদের দায়িত্বের বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা বহুদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও সুবিধা করতে পারেননি সাংসদদের বাধার কারণে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৩টি বিভাগ উপজেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করলেও অনেক ক্ষেত্রেই কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই। এ অবস্থায় কীভাবে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হবে?
প্রতিবেশী ভারতে পঞ্চায়েতব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকেই কেবল শক্তিশালী করা হয়নি, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিসহ অনেক সমস্যারই সমাধান করা গেছে। বাংলাদেশকে সেই স্তরে পৌঁছাতে হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের কাজটি শুরু তো করতে হবে।
সুষম উন্নয়ন ও সর্বস্তরে গণতন্ত্রায়ণের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় সরকার অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে যেসব আইনি ও আমলাতান্ত্রিক বাধা আছে, সেগুলো দূর করতে এখনই পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ঘোষণা কথার কথাই থেকে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.