সহিংসতা বন্ধে আনানের নতুন পদক্ষেপে আসাদের সম্মতি

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে অত্যন্ত খোলা মনে ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ ও আরব লিগের বিশেষ দূত কফি আনান। দেশটিতে দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে চলতে থাকা সহিংসতা বন্ধ এবং সংকটের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কফি আনান।


বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জাতিসংঘের দূত বলেন, ‘আমরা সহিংসতা অবসানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছি। সহিংসতা বন্ধের উপায় এবং কীভাবে তা কার্যকর করা যায়, সে সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। আমরা নতুন একটি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সম্মত হয়েছি। এই পদক্ষেপ সম্পর্কে বিদ্রোহীদের সঙ্গেও আমি আলোচনা করব।’
রাজধানী দামেস্কে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে সিরিয়া সংকট সমাধানে গতকালের বৈঠকে মূলত রাজনৈতিক সংলাপকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কফি আনান বলেন, রাজনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের উদ্যোগকে প্রেসিডেন্ট আসাদ সমর্থন করেছেন। একই সঙ্গে ছয় দফা শান্তি পরিকল্পনা (কফি আনানের পরিকল্পনা অনুযায়ী) কার্যকর করার বিষয়ে তিনি আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠক সম্পর্কে কফি আনানের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিহাদ আল-মাকদিসির টুইটারে লেখা মন্তব্যে। তিনি লিখেছেন, ‘আনানের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বৈঠকটি ছিল গঠনমূলক ও ইতিবাচক।’ তিনি উল্লেখ করেন, শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পায়।
মাকদিসি বলেন, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত সিরিয়াবিষয়ক বৈঠকে চলমান সংকট সমাধানের যেসব প্রস্তাব উঠে আসে, তা নিয়ে দুজনে আলোচনা করেছেন। ওই বৈঠকে সিরিয়ার বিবদমান উভয় পক্ষের প্রতি যুদ্ধবিরতি মেনে চলা এবং কফি আনানের শান্তি পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।
গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত জেনেভা বৈঠকের আয়োজক ছিল সিরিয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী (ইন্টারন্যাশনাল কন্টাক্ট গ্রুপ অন সিরিয়া)। এতে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী জোট উভয় পক্ষের ন্যূনতম সম্মতির ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জাানানো হয়। প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের অধীনে কাজ করা কর্মকর্তা এবং বিরোধী পক্ষের সদস্যরা ওই সরকারের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
তবে, প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে আনানের বৈঠকের নিন্দা জানিয়েছে সিরিয়ার সরকারবিরোধী জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল (এসএনসি)। সংগঠনটি বলছে, গত এপ্রিল মাসে আনানের পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। কিন্তু তা অমান্য করে এর মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে সরকারি বাহিনী। অথচ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ছিল আনানের শান্তি পরিকল্পনার মূল ভিত্তি।
লন্ডনভিত্তিক সিরিয়াবিষয়ক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৮৯৮ জন সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে।
কফি আনান বলেন, ‘আমি সিরিয়া ছেড়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা আমাদের সংলাপ অব্যাহত রাখব। সহিংসতার অবসানে নতুন যে পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, তা নিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গেও আলোচনা করব।’
কফি আনানের গতকালই সিরিয়া থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানে যাওয়ার কথা রয়েছে। সিরিয়া সংকট সমাধানে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.