ইরানের বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যায় হাত আছে ইসরায়েলের!

গত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণুবিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। ইরান অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছে, এসবের পেছনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত আছে। মোসাদ বরাবরের মতো তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে আসছে।


কিন্তু নতুন প্রকাশিত একটি বইয়ে ইরানের ধারণা সত্য বলে দাবি করা হয়েছে। ড্যান রাভিভ ও ইয়োশি মেলম্যানের লেখা বইটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের লেভান্ট বুকস। রাভিভ সিবিএস নিউজ করপোরেশনের প্রতিবেদক এবং মেলম্যান ইসরায়েলের একজন সুপরিচিত ধারাভাষ্যকার, হারেত্জ পত্রিকার গোয়েন্দা ও সামরিক প্রতিবেদক।
‘স্পাইস অ্যাগেইনস্ট আর্মাগেডন’ শিরোনামের বইটিতে দাবি করা হয়েছে, ইরানের পরমাণু গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত করতে মোসাদ দেশটির ভেতরে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অন্তর্ঘাতী কাজকর্ম চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে আততায়ীরা মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। বইটিতে দাবি করা হয়েছে, এমন পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ড চালায় একমাত্র মোসাদ।
গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে রাভিভ বলেন, ‘মোসাদের এজেন্টদের বৈশিষ্ট্য হলো তাঁরা যেকোনো গতিতে চলার সময় নিখুঁতভাবে গুলি ও বোমা ছুড়তে পারেন।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার ঘোষণা দিলে মোসাদ ইরানের ভেতরে অন্তর্ঘাতী কাজকর্ম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ইরানের পারমাণবিক গবেষণাকে বন্ধ করতে পরোক্ষ চাপ তৈরি করে মোসাদ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ইরান বলে আসছে, শুধু বিদ্যুত্ উত্পাদন ও ওষুধ তৈরির জন্য পারমাণবিক গবেষণাকে ব্যবহার করা হবে।
রাভিভ বলেন, ‘এই অভিযান এতটাই স্পর্শকাতর ছিল যে স্বয়ং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে এর নির্দেশ দিতে হয়। এ কাজে ইরানের ভিন্নমতালম্বীদের হয়তো ব্যবহার করা যেত কিন্তু মোসাদ তা করেনি। হত্যার পদ্ধতি, বিশেষত মোটরসাইকেলের ব্যবহার এবং অন্যান্য কাজ বলে দেয়, এসব মোসাদের নিজস্ব উপায়। এ কাজে মোসাদের কর্মকর্তারা অন্য কাউকে বিশ্বাস করেননি।’
মোসাদের লোকেরা ইরানে প্রবেশ ও বেরোনোর জন্য খুব গোপন ও পরিত্যক্ত পথগুলো ব্যবহার করতেন বলে দাবি করা হয়েছে বইটিতে।
সাক্ষাত্কারে আরও উপস্থিত ছিলেন বইটির সহলেখক মেলম্যান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের বিশ্বাস, তারা সফলভাবে ইরানের পারমাণবিক গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত করতে পেরেছে। হত্যাকাণ্ডের ফলে অনেক বিজ্ঞানী পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে দূরে সরে গেছেন, যাঁরা আসতে চাইতেন, তাঁরাও নিরুত্সাহিত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.