খালেদা ও ফখরুলের নেতৃত্বে জোটের পৃথক কমিটি হচ্ছে! by মোশাররফ বাবলু

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একই সঙ্গে নতুন করে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৮ দলীয় জোট। এ লক্ষ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোট নেতাদের স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মহাসচিবদের সমন্বয় কমিটি গঠনেরও।


ঈদের পর আন্দোলন জোরদারের লক্ষ্যে রমজান মাসজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক তৎপরতায় ব্যস্ত থাকবে বিএনপি। ইতিমধ্যে ১১ জুনের সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন, সরকার তত্ত্বাবধায়কের দাবি না মানলে ঈদের পর হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপি নেত্রী সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই স্থায়ী কমিটির বৈঠক আয়োজনের কথা ছিল। চট্টগ্রামে কর্মসূচি থাকায় তা হয়নি।
তবে দিন-তারিখ চূড়ান্ত না হলেও রমজান সামনে রেখে যেকোনো মুহূর্তে খালেদা জিয়া দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকতে পারেন। এরপর জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করবেন।
বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা জানান, কঠোর আন্দোলনের টার্গেট নিয়েই এবার মাঠে নামবে জোট। এর আগে দেশব্যাপী অগোছালো অবস্থায় থাকা সংগঠনকে শক্তিশালী করা হবে। একই সঙ্গে রমজানে ইফতার পার্টির মধ্য দিয়ে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলবে। তা ছাড়া ঈদ উৎসব উপলক্ষে নেতারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
নেতারা জানান, প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, বিজেপি ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ জোটের আরো দু-একটি দলের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের দুজন করে নেতার সমন্বয়ে কমিটি গঠনের আলোচনা চলছে। রমজানকে কেন্দ্র করেই সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে সব কিছু নির্ধারিত হবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ১৮ দলীয় জোট গঠনের পরপরই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াছ আলী নিখোঁজ হন। এর প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হলেও কার্যত জোটের মধ্যে সমন্বয় নেই। মূলত এ জন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে মহাসচিব পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠনের আলোচনা চলছে। জোটের যেকোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে এই কমিটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের পর কী ধরনের আন্দোলন হবে তা আগেই বলা কঠিন। সব কিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। আন্দোলন হলো চলমান প্রক্রিয়া। আন্দোলনের টার্গেট নিয়েই দলকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানো হবে। চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সব কিছু আলোচনা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি এই সরকার মেনে না নিলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যে সারা দেশে দলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রমজান মাসে জেলা কমিটি সম্পন্ন করা হবে। সারা দেশে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠনের আলোচনা হচ্ছে। তবে সব কিছু চূড়ান্ত হবে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্টিয়ারিং কমিটি ও মহাসচিবের নেতৃত্বে জোটের সমন্বয় কমিটি গঠন হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রয়োজনে সব কিছুই হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়া রমজানের আগেই কয়েকটি জেলা সফরের চিন্তাভাবনা করলেও বন্যার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। তবে সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর করে সংগঠনের সার্বিক অবস্থা চেয়ারপারসনকে অবহিত করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ কয়েকটি জেলা সফর করেছেন। এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, নেত্রী বলেছেন জনগণের দাবি মেনে না নিলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্য নিয়েই দলের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদারের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.