নিজস্ব অর্থায়ন বাদ দিয়ে দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন ॥ এমকে আনোয়ার

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে নেই বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হলে জনগণের ওপর চাপ পড়বে দাবি করে সরকারকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো একটি বৃহৎ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে আমাদের নেই। এমনিতেই অর্থনীতির দৈন্যদশা। প্রধানমন্ত্রীকে তা অনুধাবন করতে হবে। তিনি জটিলতা নিরসনে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকারকে বলব, নিজস্ব অর্থায়ন বাদ দিয়ে তারা দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সুশীল সমাজ আয়োজিত দুর্নীতির রাহুগ্রাসে কলঙ্কিত বিচার ব্যবস্থা, দলীয়করণে প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনাসভায় আনোয়ার আরও বলেন, আমরা মনে করি, বন্ডের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হলে তা জনগণের ওপর বোঝা ও জাতির জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। অর্থনীতির দৈন্যদশার মধ্যে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র প্রয়োজনীয় মাধ্যম টেলিফোনের ওপর সারচার্জ আরোপে তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ রকম সারচার্জ আরোপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে এগোনোর আগে দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার ও বিএনপি নেতা রফিক শিকদার।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় দুর্নীতির বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছেÑ মাহবুবুর ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখে অবস্থান করছি। অন্যভাবে বলতে গেলে ৭ দশমিক ৫ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছি। সোমবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সাপ্তাহিক কাগজ আয়োজিত ‘বিদ্যুত ও জ্বালানি : আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি আরও বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বড় একটি দুর্নীতির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন একজন ব্যক্তি। কিন্তু কেন গোটা দেশকে জিম্মি করে একজনকে রক্ষা করতে হবে সরকারকে। জনমত উপক্ষো করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজনকে বাঁচানোর পক্ষে সরকার অবস্থান নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যুত খাতে ইনডেমনিটি আইন করায় মানুষের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই এর মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইনডেমনিটি জারি করে কাউকে রক্ষা করা যায়নি। কুইক রেন্টাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যায় ততই মঙ্গল।
বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে ॥ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতির মাধ্যমে জাতির কপালে কালিমা লেপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দুই বেলার মধ্যে একবেলা না খেয়ে সে অর্থ পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দিতে প্রস্তুত আছি। তবে তার আগে বিশ্বব্যাংকের লেখা দুর্নীতির চিঠি ও দুর্নীতিবাজদের নাম সরকারকে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাসাস ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত ‘দুর্নীতি ও বর্তমান সরকার’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের টাকার অভাব নেই, দু’একজন মন্ত্রীকে বললেই একটি পদ্মা সেতু করে দিতে পারে। কারণ, বিগত ৩ বছরে তারা অনেক টাকা কামিয়েছে। তাই এ টাকা বিদেশে পাচার না করে দেশের স্বার্থে খরচ করা উচিত।
জাসাস ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল হান্নান মাসুমের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হেলেন জেরিন খান, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান প্রমুখ।
শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদা চৌধুরীর কঠোর সমালোচনা করে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমি ওনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি তাই ওনার মুখে এমন কথা আশা করিনি। কারণ, বিএনপি হত্যা, গুম ও খুনের রাজনীতি করে না। এ ছাড়া যখন শেখ মুজিব হত্যাকা- ঘটে তখন বিএনপির জন্মই হয়নি। আপনাদের পিতাকে আপনারাই হত্যা করেছেন। আমরা এ জন্য দায়ী নই।
দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে বর্তমান সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে ফারুক বলেন, সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সে কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। মঈন-ফখরুদ্দীন মার্কা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। আর যদি আমাদের দাবি না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তবে তা বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোন অবস্থাতেই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।
দুলু বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ॥ বিএনপির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। তাকে রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে আসাদুল হাবিব দুলুকে এ দায়িত্ব প্রদান করেছেন বলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। উল্লেখ্য, জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি করা হলেও তখন রংপুরকে সরকার বিভাগ ঘোষণা না করায় এ বিভাগের জন্য কোন সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়নি। তবে রংপুর বিভাগ হওয়ার পর থেকে এ দায়িত্ব কাকে দেয়া যায় এ নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে। সোমবার আসাদুল হাবিব দুলুকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.