সোহেল তাজের পদত্যাগ-রাজনীতিতে আরেকটি অশুভ দৃষ্টান্ত

অবশেষে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তিনি এখন একজন সাবেক সংসদ সদস্য। আর যেহেতু তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাই রীতিমাফিকই তাঁর মন্ত্রিত্ব চলে যাবে।


তবে সেই পদত্যাগপত্র তিনি অনেক আগেই জমা দিয়ে রেখেছেন এবং প্রচারমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার জন্য চাপও সৃষ্টি করেছিলেন। দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পদত্যাগ নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে, মান-অভিমান হয়েছে, আবার অভিমান কাটানোর চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু সোহেল তাজ নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন ও আছেন। তিনি 'সক্রিয় রাজনীতি' থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কেন? উত্তরটি সোহেল তাজও দেননি, তাঁর দল থেকেও দেওয়া হয়নি। তবে সোহেল তাজ সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আপনারা সবই জানেন' এবং তিনি মন্ত্রিত্বের সময় নেওয়া শপথ ভাঙতে অস্বীকৃতি জানান। তার অর্থ, এ ব্যাপারে বাজারে প্রচলিত কথাগুলোর মধ্যেই কোনো একটিকে তিনি ইঙ্গিত করেছেন। আর বাজারে যে কথাগুলো প্রচলিত আছে, সেগুলো না আওয়ামী লীগের জন্য, না দেশের জন্য সুখকর।
সোহেল তাজ কেবল আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যই ছিলেন না, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ঐতিহ্যের একজন ধারকও ছিলেন। সোহেল তাজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রে উঠে আসা কিছু খুনির হাতে কারাগারে নিহত জনপ্রিয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। তাঁর মা জোহরা তাজউদ্দীনও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সেই প্রেরণা নিয়েই তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। জনগণও তাঁকে সেভাবেই গ্রহণ করেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলেও মানুষ সোহেল তাজকে প্রত্যাখ্যান করেনি। বিপুল ভোট পেয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাঁচ মাসের মন্ত্রিত্বকালে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। সেই সোহেল তাজের এভাবে চলে যেতে বাধ্য হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আর শুধু দুঃখজনকই নয়, এতে আমাদের রাজনীতি নিয়েও জনমনে শঙ্কা জাগে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি এ দেশের রাজনীতিতে আর কোনো ভালো মানুষের জায়গা হবে না? দুর্নীতিবাজ-তদবিরবাজ-মতলববাজ ব্যক্তিরাই কি ক্ষমতার সঙ্গী হবে? যারা জনগণের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে খই ফোটায় আর অন্তরালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে এক পাতে খায়- তারাই কি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে? সোহেল তাজের দুঃখজনক বিদায় এমনি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মুখোশ কখনো স্থায়ী হয় না

No comments

Powered by Blogger.