স্বাস্থ্য খাতে সঙ্কট ॥ জনস্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা নয় by ড. হারুন রশীদ

চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও এ সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব, নার্স ও স্বাস্থ্যসহকারী না থাকা, চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব ইত্যাদি কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের বেশিরভাগ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নেই।
যন্ত্রপাতি নেই। বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় সবচেয়ে সঙ্কটে পড়েছে স্বাস্থ্য খাত। সরকারী হাসপাতালগুলোতে ৫ থেকে ৭ হাজারেরও বেশি ডাক্তারের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি আছে। এ ছাড়া ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান ও হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৮৯টি। অবসরে যাওয়া, বিভিন্ন কারণে চাকরি ছেড়ে দেয়া, উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বিদেশ যাওয়া ইত্যাদি কারণে এক থেকে দেড় হাজার চিকিৎসকের পদশূন্য হচ্ছে প্রতিবছর। কিন্তু সে তুলনায় নিয়োগ না হওয়ায় সঙ্কট বেড়েই চলেছে। সারাদেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন ডাক্তারের জায়গায় গড়ে মাত্র ৩ জন ডাক্তার রয়েছেন। এ অবস্থায় রোগীরা এসব হাসপাতালে কী ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছেন তা সহজেই অনুমেয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসকের কাজে সহায়তার জন্য ৩ জন নার্স, ৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী প্রয়োজন। কিন্তু জনবল না থাকায় বর্তমানে দেশে একজন চিকিৎসককে সহায়তা করেন দশমিক ৫৪ নার্স এবং দশমিক ২৭ স্বাস্থ্য সহকারী। দেশের ৫ শতাধিক সরকারী হাসপাতালে এভাবেই চিকিৎসাসেবা চলছে। শহরের তুলনায় গ্রামের হাসপাতালের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে জনবলসহ ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সঙ্কট চরমে। এ কারণে সেবা না পেয়ে রোগীরা শহরমুখী হচ্ছে। জেলা এবং বিভাগীয় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ কারণে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় হাসপাতালে নানা ধরনের সঙ্কট থাকায় তাদের সারাক্ষণই একটা শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কাছে ভুয়া ডাক্তারের বিষয়টি রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভেজালের ভিড়ে আসল চেনাই যেন দায়। বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে, তাতে নামের শেষে দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া বড় বড় ডিগ্রীর কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক খুলে বসে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব নামীদামী ক্লিনিকের অনেক ডাক্তারেরই নেই প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা। এমনকি অনেকের চিকিৎসাবিদ্যার কোন সার্টিফিকেটও নেই। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, খোদ রাজধানীতেই এসব ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাঝে মধ্যে দু’একজন ধরা পড়লেও নামমাত্র শাস্তির কারণে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং আবার একই ধরনের কর্মকা-ে লিপ্ত হচ্ছে। ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য নিয়ে মাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ৮ জুলাইয়ের জনকণ্ঠে খবর বেরিয়েছে এ বছর ২৭ জন ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় একের পর এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনাও অনেক বেড়েছে। দেশের প্রথম শ্রেণীর অনেক হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকও এমন অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না। এতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের মনে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। চিকিৎসক ও রোগীর পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ভাংচুর, শারীরিক আঘাত-প্রতিঘাত এবং মামলা-মোকদ্দমার মতো ঘটনাও ঘটছে।
রোগব্যাধি হলে ওষুধ খেয়ে জীবন রক্ষা করে মানুষ। কিন্তু সেই ওষুধেও ভেজাল। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কোন স্তরেই সরকারী পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদফতরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করে মানুষজন। এভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলো এ দেশের মানুষকে রীতিমতো গিনিপিগে পরিণত করেছে। এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতিবছর ১২ হাজার আইটেম ওষুধ বাজারে আসছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের যে লোকবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে তারা মাত্র সাড়ে তিন হাজার আইটেম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। বাকি ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাইহীন অবস্থায় রয়ে যায়।
বাজারে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তাতে ১৮টি খনিজ উপাদান আছে বলে উল্লেখ করা হলেও এর ছিটেফোঁটাও আছে কিনা পরীক্ষার অভাবে তা জানা সম্ভব নয়। এমনকি ২০০৮ সালে রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি যে প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে সেই প্যারাসিটামল পরীক্ষার যন্ত্রপাতিও নেই ওষুধ প্রশাসনের। তখন এ নিয়ে তোলপাড় চললেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগারের একমাত্র গ্যাসক্রোমোটোগ্রাফি মেশিনটি নষ্ট। গত তিন বছর ধরে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। এই মেশিনেই প্যারাসিটামল সিরাপ পরীক্ষা করা হয়। বাজারে যে প্যারাসিটামল সিরাপ পাওয়া যাচ্ছে তা পরীক্ষাহীন অবস্থায়ই বাজারজাত করা। ফলে যে কোন সময় আবার ওই বিয়োগান্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ওষুধ প্রশাসন পরিদফতরকে ২০১০-এর ১৭ জানুয়ারি অধিদফতরে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এর তেমন কোন উন্নতি হয়নি। নেই ওষুধের মান যাচাই ও পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও। অধিদফতরের পরীক্ষাগারে আলসারের ওষুধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক ওষুধ ও ভিটামিন পরীক্ষা করা যায়। ক্যান্সার, হরমোনজাতীয় ওষুধ এবং স্টেরয়েড পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে ওষুধের মান যাচাইও সম্ভব হচ্ছে না। আর এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ওষুধ প্রশাসন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি সম্প্রতি দেশের ১৯৩টি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। এতে দেখা যায়, ৬০টিরও বেশি কোম্পানি উৎপাদন ও বিপণনের শর্ত মেনে চলছে না।
ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর মতে, ওষুধ উদ্ভাবনকারী ছাড়া বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত করাই হচ্ছে নকল ওষুধ। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত চলছে। ফলে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক কোম্পানি জেনেশুনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ অনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। অথচ বাংলাদেশে ওষুধ একটি বিকাশমান শিল্প। শুধু জনস্বার্থই নয়, কোম্পানিগুলোর নিজ স্বার্থেও ওষুধের মান ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরী। ওষুধের মূল্য নির্ধারণেও চলছে অরাজকতা। গত ছয় মাসে ওষুধের দাম শ্রেণীভেদে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারের মতো ওষুধের বাজারও কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন। জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও জীবনমান রক্ষার জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বে ওষুধের ন্যায্যমূল্য এবং সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়। সে কারণে ওইসব দেশে কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো ওষুধের দাম বাড়াতে পারে না। এককভাবে ওষুধের মূল্য নির্ধারণেরও ক্ষমতা নেই তাদের। কিন্তু বাংলাদেশ তো সব সম্ভবের দেশ। এখানে যে যেমন পারে করে কেটে খাচ্ছে। জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। ওষুধের দাম ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কেন বাড়ল এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই। কাঁচামালের দামবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হলেও মুনাফালোভী মানসিকতাই এখানে দায়ী। দেখা যাচ্ছে, একই ওষুধের দাম এক এক কোম্পানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা এবং তার পার্থক্যও অনেক। বাংলাদেশ ১৯৮২ সালে ওষুধ নীতি গ্রহণ করে। এর মূল দর্শন ছিল জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। কিন্তু ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দাফতরিক নির্দেশনায় বলা হয় অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত সব ওষুধের দাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই নির্ধারণ করবে। ফলে সরকার বাজারের বেশিরভাগ ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারায়। কারণ অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত ওষুধের সংখ্যা মাত্র ১১৭টি আর বাজারে ওষুধের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। এ অবস্থায় মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ফিরিয়ে নিতে হবে। না হলে এ মূল্যসন্ত্রাস থেকে জানসাধারণকে রক্ষা করা যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, অধিকাংশ হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়ার অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি নেই। সেবাদানকারীরা সময়মতো কর্মক্ষেত্রে হাজির হন না। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ৫৭ ভাগ সেবাদানকারী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন ইত্যাদি। ১৩টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় জরিপ চালিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ চিত্র আসলে সারাদেশেরই। বলতে গেলে প্রকৃত অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। ডাক্তাররা গ্রামে যেতে চান না। ওষুধপত্রের সঙ্কট। চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব। দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও আসলে ভাল নয়। এ ছাড়া চিকিৎসা এখন সেবা নয়, বাণিজ্য। যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে হাসপাতাল ক্লিনিক। ডাক্তাররা এখন সরকারী হাসপাতালে সময় দেয়ার চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক মনোযোগী। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকার নানা উন্নয়নমুখী কর্মকা- চালালেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ভাবতে অবাক লাগে, দেশে বর্তমানে ২৭৮৫ জন নাগরিকের জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র একজন। এটা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবা নিয়েও চলছে নানা বাণিজ্য। যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক। ডাক্তাররা এখন সরকারী হাসপাতালে সময় দেয়ার চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক মনোযোগী। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবার মানবৃদ্ধির ওপর স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি নির্ভর করে। এ কারণে ভুয়া ডিগ্রী, পদবি ব্যবহারকারী এবং ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সবার আগে জনবল সঙ্কট দূর করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদিরও যাতে কোন অভাব না থাকে এ ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। মানুষের এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।
যধৎঁহথঢ়ৎবংং@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.