রুপালি রঙের পুঁটি, কাঁচা মরিচ আর গরম ভাত গাঁওগেরামে উৎসব-নদীতে মাছ ধরার ধুম by তাহমিন হক ববি

কাঁচা মরিচ দিয়ে রূপালী রঙের পুঁটি মাছ আর উচ্ছের মিশ্রণে সরিষার তেলের রান্না করা ঝোল দিয়ে গরম গরম বোরোর চালের ভাত এখন গাঁও গ্রামের ঘরে ঘরে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত স্থান পেয়ে বসেছে। চলছে বর্ষার দিন। বৃষ্টি, সঙ্গে ঠা-া হাওয়া। গ্রামের ভেতর দিয়ে এঁকে বেঁকে ছুটে চলা ছোট নদীগুলো এখন বর্ষার পানিতে ভরে উঠছে।


আর সেখানেই হাত বাড়ালেই সহজে মিলে যাচ্ছে রূপালী রঙের পুঁটি মাছ। পুঁটি মাছের ছড়াছড়ি।
আর সেই মাছ ধরতেই পরিবারের গৃহবধূরাও নেমে পড়ছে নদীর পানিতে। জাল দিয়ে নয়, হাত দিয়েই ধরছে পুঁটি মাছ।
গরম গরম ভাতের সঙ্গে এই মাছের ঝোল দিয়ে পেটভর্তির পর তৃপ্তির ঢেকুরের সঙ্গে মুখে হাসি। কার সাধ্য আছে বলবে খাওয়াটা ভাল হলোনা। জ্বি, ঘোর বর্ষায় এটাই চলছে উত্তরজনপদের নীলফামারীর গ্রামে গ্রামে। কেউ কেউ আবার পুঁটি মাছের ঝলের পাশাপাশি পুঁটি মাছের ভাজাও করছেন।
এ জেলার বিভিন্ন গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে অনেক ছোট ছোট নদী। কুমলাই, নাউতারা, শিংড়াহারা, বুড়ি তিস্তা, চাড়ালকাটা, বুড়িখোড়া প্রভৃতি।
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে নদীতে নতুন পানির সঙ্গে নতুন টাটকা মাছ। বেশি মিলছে পুঁটি। জাল পেতে বা ফেলে নয়, হাত দিয়ে হাতিয়েই নদীতে ধরা যাচ্ছে মাছ। পুঁটি আর ছোট ছোট চিংড়ি। মজার ব্যাপার হলো বাড়ির পুরুষরা কাজে ব্যস্ত। আর গৃহবধূরা সংসারের কাজের পাশাপাশি নেমে পড়ছে ওইসব নদীতে। হাত দিয়েই তারা সহজে ধরে ফেলছে মাছ। দৃশপট যে কেউ দেখলেই আনন্দে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। যেন মনে হবে শিশুদের মতো খেলা করছে গৃহবধূরা। এ যেন মাছ ধরার উৎসব।
ডিমলা উপজেলার কুমলাই নদীতে বেশ কিছু গৃহবধূকে দেখা গেল ঢেকচি নিয়ে নদীতে নেমে পড়তে। তারা হাতিয়ে হাতিয়ে পটাপট ধরে ফেলছে পুঁটি মাছ। ছাতনাই গ্রামের গৃহবধূ রহিমা, সুলতানা, মর্জিনা, আয়শা, শেফালী, শাপলা, জরিনা, জয়নাবসহ আরও অনেকে। তারা হাসি মুখে বলেন, বর্ষার পানির সঙ্গে মাছের আকাল তাদের ফুরিয়ে গেছে। নদীতে নামলেই হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছে পুঁটি মাছ। এবার পুঁটি মাছ প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। আর এই পুঁটি মাছ নিয়ে তারা কাঁচা মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে রান্না করছে পুঁটি মাছের সঙ্গে উচ্ছের ঝোল । সঙ্গে পুঁটি মাছের ভাজা। টাটকা মাছের সঙ্গে বোরো ধানের চালের গরম গরম ভাত পরিবারের সকলকে তৃপ্তির ঢেকুর পাইয়ে দিচ্ছে।
এদিকে বর্ষার কারণে নীলফামারীর ডিমলায় মঙ্গলবার সকালে বিবিপিএস ফাউন্ডেশনের বাঁশজাত পণ্য ক্রয় কেন্দ্র ও শো-রুমের উদ্বোধন করা হয়। এখানে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার জন্য খালই, টেপাই, চাইলনসহ ডালি, কুলা, প্যাকেটিং ঝুড়ি।
ডিমলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ১২৪জন দরিদ্র ও হতদরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে বাঁশ ও বেতের উপর ৩ দিনের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব তৈরি করেছেন। কেয়ার বাংলাদেশ, জেএসকেএস এবং বিবিপিএসএফ-এর যৌথ উদ্যোগের অংশ এবং উক্ত প্রশিক্ষণ শেষে উপকারভোগীরা যে সব পণ্য উৎপাদন করেন তা ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ডিমলা উপজেলায় একটি শো-রুম করেছেন। মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেএসকেএস সৌহার্দ্য-২ প্রোগ্রাম ম্যানেজার আতাউর রহমান আনছারী, টেকনিক্যাল অফিসার কৃষি ও জীবিকায়ন এএইচএম কামরুজ্জামান, টেকনিক্যাল অফিসার আহাদুজ্জামান বিপুল, আইও-জেএসকেএস সাহাদত হোসেন, টেকনিক্যাল অফিসার কেয়ার বাংলাদেশ পারুল রানী ম-ল, টেকনিক্যাল অফিসার মনোয়ার হোসেন, কেয়ার বাংলাদেশের ডিমলা উপজেলার প্রোগ্রাম ম্যানেজার আমজাদ হোসেনসহ আরও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকলে উক্ত কার্যক্রমটি দরিদ্র ও হতদরিদ্র উপকারভোগীদের জীবনযাত্রার মান আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.