ডাকাতি-খুন-ছিনতাই বেড়েছে

চাঞ্চল্যকর হত্যাসহ সারা দেশে প্রতিদিনই অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবারের পত্রিকার একটি প্রধান খবর হচ্ছে_ময়মনসিংহের ফুলপুরে এক মা ও তাঁর দুই মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, সম্পত্তির লোভে তাদের হত্যা করা হয়েছে।


কল্পনা করা যায়, মানুষের নৈতিকতার কতটা অধঃপতন হলে সামান্য সম্পত্তির লোভে তিন তিনটি প্রাণকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা যেতে পারে! বহু গ্রামেই ডাকাতের ভয়ে মানুষ সারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে, এমন খবরও কাগজে বেরোচ্ছে। এদিকে পত্রিকায় আরো খবর আছে যে, ধানমণ্ডিতে সকাল ১১টায় ছয় লাখ টাকা ছিনতাই, কঙ্বাজারের রামুতে ডাকাতের গুলিতে একজন নিহত, বরগুনায় এক প্রবাসীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। একই দিনে ঢাকায় তিনটি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা হত্যা নাকি আত্মহত্যা_তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এর আগের দিন সোমবার রাজধানীতে তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩৫ লাখ টাকা লুট এবং গুলিতে চালের আড়তের ব্যবস্থাপক নিহত ও আরেক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই দিনে বাড্ডায় আরেক ব্যবসায়ী আহত, বগুড়ায় নৈশপ্রহরী খুন, রাজশাহীতে দোকান ভাংচুর-লুটপাট, সিরাজদিখানে সংঘর্ষ, অগি্নসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনাও অহরহ ঘটেই চলেছে। তার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাহলে তাঁর কথার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারবে কি করে?
সারা দেশে যেভাবে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ডাকাতি-ছিনতাই ও খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিক জীবনেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। এভাবে অপরাধ তৎপরতা বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? এর প্রতিকার তো রাষ্ট্রকেই করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের জন্য যে পুলিশ আছে, তাকে নগণ্য বললেও সম্ভবত কম বলা হবে। তদুপরি, পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ রয়েছে। ফলে পুলিশের ওপর মানুষ যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারছে না। প্রয়োজনে পুলিশ বিভাগের জন্য শক্তিশালী গোয়েন্দা ইউনিট গড়ে তুলে পুলিশের অপরাধ-সম্পৃক্ততা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো অপরাধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। ক্রমান্বয়ে অপরাধের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
নিকট অতীতে দেখা গেছে, অপরাধীরা ঘুষ দিয়ে পুলিশ বা রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে ফেলত এবং খুনের মতো অপরাধ করেও নিজেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতে পারত। এটি দেশে অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। যেকোনো মূল্যেই হোক, এর লাগাম টেনে ধরতে হবে। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকার অর্থহীনভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা না করে সেই লাগাম টেনে ধরার চেষ্টাই করবে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার নামে কিংবা দলীয় আনুকূল্যে কোনো অপরাধী যেন কোনোরকম সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.