'তৌফিক-ই-ইলাহী জাতিকে ধ্বংসের কাজ করছেন'

'তাঁকে এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তৌফিক-ই-ইলাহী জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছেন। তিনি তাঁর বিত্ত-বৈভব বাড়ানোর জন্য কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়েছেন'- পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বিডি রহমতউল্লাহ গতকাল সোমবার এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-


ই-ইলাহী চৌধুরী প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন। রাজধানী ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি' শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে সাপ্তাহিক কাগজ। সেমিনারের আরেক বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান অবিলম্বে আনোয়ারা ও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, 'এ প্রকল্প দুটি পরিবেশের চরম ক্ষতি করবে। এ জন্য এর নির্মাণ থেকে দ্রুত সরে আসা দরকার।' অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মুনসুর, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক প্রমুখ।
উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীকে অত্যাচারী জমিদারের সঙ্গে তুলনা করে বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, 'যারা আফিম এবং ইয়াবা খায় তারা সঠিক পথে যেতে পারে না।' অনুষ্ঠানে উপস্থিত এফবিবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, 'এ কথা আমি তৌফিক ইলাহীকে বলেছি।' এর আগে অনুষ্ঠানে আনিসুল হক কুইক রেন্টালের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, 'বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে কুইক রেন্টাল ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না।' আনিসুল হকের এ বক্তব্যের জবাবে বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, 'কুইক রেন্টালের বিকল্প ছিল না বলে যাঁরা মন্তব্য করেন তাঁরা না জেনেই তা করেন। কুইক রেন্টাল আজকেই বন্ধ করে দিয়ে সুন্দরভাবে দেশ চালানো সম্ভব।' এ পর্যায়ে বিদ্যুৎ খাত তত্ত্বাবধানকারী সরকারি সংস্থা পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি আবারও বলেন, 'যারা আফিম এবং ইয়াবা খায় তারা সঠিক পথে যেতে পারেনি।'
আনিসুল হক সেমিনারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশংসা করে বলেন, '২০০৯ সালে বিদ্যুতের যে অবস্থা ছিল তাতে কুইক রেন্টালের বিকল্প ছিল না। যাঁরা সমালোচনা করেন তাঁদের বলব, শিল্পে এর ফলাফল খুঁজে দেখতে।' তিনি আরো বলেন, 'বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ায় শুধু গার্মেন্ট খাতেই ছয় বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার রপ্তানি বেড়েছে।' পাওয়ারের চেয়ে বেশি দাম ভালো কি না তা ভেবে দেখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভালো করেছে কি না তার রায় জনগণ আগামী ভোটে দেবে।'
আনিসুল হকের বক্তব্যের জবাবে বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, 'দেশের সরলমনা মানুষ যখন তাঁকে সমর্থন করে তখন আমার কষ্ট হয়। এ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৯৬৯ সালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ভিয়েতনাম আগ্রাসনের সময় বিপদে পড়ে ব্যবহার করেছিল। সেটা এখন বাংলাদেশে ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই।' তিনি সেমিনারে বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলেন, 'আমরা কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। হাঁটু ভেঙে পড়ে আছি। এখন দাঁড়াতে গেলে দশ হাত প্রয়োজন।'
রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ভরতা সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মুনসুর সেমিনারে বলেন, 'মধ্যমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ কারণে রেন্টাল নির্ভরতা তিন বছর থেকে বেড়ে পাঁচ বছর হয়েছে। রেন্টাল নির্ভরতা সাত বছর, এমনকি ১১ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, 'অবিলম্বে আনোয়ারা ও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত সরকারের। তিনি বলেন, 'এ প্রকল্প দুটি পরিবেশের চরম ক্ষতি করবে। এ জন্য এর নির্মাণ থেকে দ্রুত সরে আসা দরকার।' এ সময় তিনি জ্বালানি উপদেষ্টাকে ইংগিত করে বলেন, 'জ্বালানি মন্ত্রণালয় বড় একটা দুর্নীতির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একজন ব্যক্তি। কিন্তু কেন গোটা দেশকে জিম্মি করে একজনকে রক্ষা করতে হবে সরকারকে? জনমত উপেক্ষা করে যোগাযোগমন্ত্রীর মতো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজনকে বাঁচানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সরকার।' তিনি আরো বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) আইন করায় মানুষের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইনডেমনিটি জারি করে কাউকে রক্ষা করা যায়নি।' কুইক রেন্টাল সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এটি থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হওয়া যাওয়া যায় তত মঙ্গল।'
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, 'কুইক রেন্টাল কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে না। বিদ্যুৎ খাত দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'চুক্তিগুলো নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত।' আবুল মকসুদ সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'এই সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য সকল পক্ষের লোকদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা দরকার।'
ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, স্বল্প মেয়াদে কুইক রেন্টাল ভালো ছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। কয়লানীতি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়লানীতি চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হবে। এলপিজি আমদানি ও বিকল্প জ্বালানির দিকে নজর দিতে হবে। সেইসঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির হায়াত খান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এ আরাফাত।

No comments

Powered by Blogger.