ভারতীয় ঋণে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে কাজ শুরুর আগেই-এক শ’ কোটি ডলার ॥ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নানা জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক কাল by হামিদ-উজ-জামান মামুন

বাস্তবায়ন শুরুর আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় ১শ’ কোটি ডলার ঋণের প্রকল্পের। ফলে ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঋণ চুক্তির পৌনে দুই বছর পার হয়ে গেলেও ঋণের এ যাবত ছাড় হয়েছে মোট ঋণের শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এ প্রেক্ষিতে আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক।


এতে প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা, সমস্যা, সম্ভাবনা এবং করণীয় বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, ভারতীয় এক বিলিয়ন ডলারের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ বৈঠকে অংশ নেবে। এটি নিয়মিত বৈঠকের অংশ।
সূত্র জানায়, প্রথম দিকে এ ঋণের টাকায় গৃহীত প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০টি। পরে তা সংশোধন করে প্রকল্প সংখ্যা কমানো হয়। এর মধ্যে ৩ প্রকল্প বাদ দেয়ার জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে ৫ প্রকল্প। ফলে বর্তমানে এই টাকায় ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য নেয়া এই ১২ প্রকল্পের মধ্যে ৪ প্রকল্পের মেয়াদকাল ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে। ফলে বাড়বে বাস্তবায়ন ব্যয়। এ বিষয়ে ইআরডি বলছে, বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কোন সমস্যা হবে না। কেননা এই ঋণের অর্থ থেকেই এ বাড়তি ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। এ বিষয়ে সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
মেয়াদ শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, বারইঘাট সুলতানপুর পোর্ট কানেকটিং রোড প্রকল্প, লালমনিরহাট বুড়িমারী রোড প্রকল্প, প্রকিউরমেন্ট অব ২৬৪ এমজি প্রকল্প, রেলওয়ের জন্য ১০ সেট বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হবে। ফলে এজন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে কয়েক শ’ কোটি টাকা।
অন্যদিকে শুধু রেলওয়ের জন্য ১০ সেট বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সূত্র মতে, মূল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন লাভ করে। এটির বাস্তবায়নের মূল এলাকা ছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-নরসিংদী এবং চট্টগ্রাম-ফেনী।
পরবর্তীতে ভারতের কোন সরবরাহকারী বা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চাহিদামতো মিটার গেজ ডিইএমইউ তৈরি না করায় দেখা দেয় বিপত্তি। অবশেষে ঋণের শর্ত অনুযায়ী বাধ্য হয়েই ভারতীয় কোম্পানির ইচ্ছা অনুযায়ী ১০ সেট মিটার গেজ (এমজি) ডিইএমইউয়ের পরিবর্তে ১০ সেট ব্রড গেজ (বিজি) ডিইএমইউ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে ১০ সেট বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট সংগ্রহের প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন ও দরপত্র আহ্বানের অনুমতি চেয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। ২০১১ সালের ১ জুন প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে প্রকল্পের শিরোনাম, প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং প্রকল্প এলাকা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ জন্য ব্যয় বাড়িয়ে বর্তমান প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে মোট ৪৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ১শ’ কোটি ডলার (২০ কোটি অনুদান) ঋণের মধ্যে এ যাবত ছাড় হয়েছে মাত্র ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৩ মার্কিন ডলার। যা মোট ঋণের শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে ৬টি কিস্তির অর্থছাড় হয়েছে বিআরটিসির ৩০০টি ডেকার, ডবল ডেকার ও এসি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় শীর্ষক প্রকল্পের বিপরীতে আর বাকি একটি কিস্তির অর্থছাড় হয়েছে ভৈরব তিতাস রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ ওয়ান শীর্ষক প্রকল্পের কন্সালটেন্সি ও সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য প্রাথমিক কার্যক্রমের বিপরীতে।

No comments

Powered by Blogger.