যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে : মুক্তি পেয়েও নির্বাসনে যেতে হলো ৪০ ফিলিস্তিনিকে

সরাইলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মিসর থেকে সিরিয়া, তুরস্ক, কাতার ও জর্ডানে পৌঁছেছেন। ফিলিস্তিনে ফিরে গেলে ইসরাইলের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারে—এ আশঙ্কায় ওই ৪০ জনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের স্বাক্ষরিত বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী তারা মুক্তি পেয়েছেন। ৪০ জনের মধ্যে ১৫ জনকে সিরিয়ায়, ১১ জনকে তুরস্কে, ১৩ জনকে কাতারে এবং একজনকে জর্ডানে পাঠানো হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ ওয়ায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছে বলেছেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।


নিজ বাড়িতে যেতে না পারার দুঃখ আছে। তবে আমরা আরব দেশগুলোকে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি বলে মনে করি।’ বিভিন্ন শাহাদাতপিয়াসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ ওয়ায়েলকে ইসরাইলি আদালত এক হাজার ছয়শ’ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দিয়েছিল। মুক্তিপ্রাপ্ত সব বন্দির চোখেমুখে ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের ছাপ। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে গতকাল ৪৭৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে। হামাসও ইসরাইলি সেনা গিলাদ শালিতকে মিসরের কাছে হস্তান্তর করে। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে ২৯৬ জন গাজায় এবং আরো বেশ কয়েকজন পশ্চিমতীরে ফিরে গেছেন। বন্দিরা গাজায় ফিরে এলে সেখানে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতরণা হয়। আত্মীয়স্বজনের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন; আবার অনেকে হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত। গতকাল গাজা শহরে প্রায় দু’লাখ মানুষ ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ফিলিস্তিনের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ইসরাইলি সেনা গিলাদ শালিতকে আটক করে কোনো লাভ হয়নি বলে এর আগে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু আজ প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের ধারণা ছিল ভুল। পশ্চিমতীরেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বাগত জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যের নিদর্শন হিসেবে পশ্চিমতীরে মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে হামাসের তিন নেতাও মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। চারজনই এক সঙ্গে হাত উঁচু করে নিজেদের ঐক্যের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেন। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে এক হাজার ২৭ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে। বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় পর্যায় অনুষ্ঠিত হবে আগামী দু’মাসের মধ্যে। ২০০৬ সালে গিলাদ শালিত ট্যাঙ্ক নিয়ে অবৈধভাবে গাজা উপত্যকায় ঢোকার পর হামাস যোদ্ধারা তাকে আটক করেছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেকেই মিসরের জনগণ ও হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে এক হাজারেরও বেশি বন্দির মুক্তির বিষয়ে ইসরাইলের ভেতরে অনেকে আপত্তি জানিয়েছিল। এই আপত্তি গড়িয়েছিল আদালতেও। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, বিরোধিতাকারীদের ক্ষোভ ও ভীতির কারণ আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ইসরাইলি সৈনিককে মুক্ত করার বিরল সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের কষ্ট আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। এটা বর্ণনা করার মতো নয়। তাদের জন্য এটা খুব কঠিন যে, যারা তাদের প্রিয়জনকে হত্যা করেছে, পুরো শাস্তি ভোগ করার আগেই তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। তবে সদ্য মুক্তি পাওয়া গিলাদ শালিত বলেন, এই সমঝোতা ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে আমি আশা করছি এবং আমি আরও আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কও সংহত হবে। তবে সংবাদদাতারা বলছেন ব্যাপকতর শন্তি আলোচনায় বন্দি বিনিময় বড় রকমের প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।
এদিকে ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা গিলাদ শালিতের মুক্তির ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্ক টোনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি বলেন, আমরা এমন কয়েকজন ফিলিস্তিনির মুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলাম, যারা মার্কিনিদের জন্য হুমকি। এদিকে গিলাদ শালিতের মুক্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, তার (শালিত) খুব বেশি দিন বন্দি থাকা হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.