'ওকে বাদ দিতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে' by নোমান মোহাম্মদ

মোহাম্মদ আশরাফুলকে দলে রাখলে সমালোচনা শুনতে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াড থেকে অভিষেকে টেস্টে সেঞ্চুরি করা এ ব্যাটসম্যানকে বাদ দিয়েও যথেষ্ট সমালোচিত আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করা আশরাফুল কেন নেই? অলক কাপালির ওপর থেকে এত দ্রুত আস্থা হারিয়ে ফেলা কি ঠিক হলো? প্রশ্ন উঠেছে আশরাফুল-রাজ্জাক-অলকদের বাদ দিয়ে আগের সিরিজে উপেক্ষিত রকিবুল হাসানের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও।প্রশ্ন : প্রথম প্রশ্ন। এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। মোহাম্মদ আশরাফুলকে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার কারণটা বলবেন?


আকরাম খান : সত্যি বলছি, ওকে বাদ দিতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ ওর প্রতিভা যে কী, সেটি আমরা তিন নির্বাচক খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু একই সঙ্গে বাস্তবতাটাও আমাদের দেখতে হয়েছে। আশরাফুল তো অনেক সুযোগ পেল। কিন্তু ওর কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা, সে অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি। তাই তিন নম্বর পজিশনে ওর জায়গায় শাহরিয়ার নাফীসকে নিয়েছি। ও আশরাফুলের মতো অত সুযোগ পায়নি। আর অভিজ্ঞতাও আছে। সব মিলিয়ে নাফীসকেই বেটার মনে হয়েছে।
প্রশ্ন : তার পরও আশরাফুল কি একটু দুর্ভাগা না? বিশেষত শেষ টেস্টে ৭৩ ও ৩৯ রানের দুটো ইনিংস খেলার পর।
আকরাম : আমি একটা ব্যাপার পরিষ্কার করি। অনেক দেশেরই টোয়েন্টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও টেস্ট দল ভিন্ন ভিন্ন হয়। আমাদের কিন্তু সেটি করার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ আমাদের হাতে সেই রকম মানের বিকল্প ক্রিকেটার নেই। টোয়েন্টি-টোয়েন্টি দল হয়তো কিছুটা ভিন্ন। তবে টেস্ট ও ওয়ানডে স্কোয়াড নিয়ে একেবারে আকাশ-পাতাল আলাদা করে ভাবার অবস্থায় আমরা এখনো যাইনি। আশরাফুল জিম্বাবুয়েতে টেস্টে ভালো করেছে ঠিকই। কিন্তু এর পর থেকেই আর রানে নেই। ওখানে টেস্ট খেলার পর তিনটি ওয়ানডে খেলেছে, ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ও দুটি ওয়ানডে খেলল। কোথাও তেমনভাবে রান পায়নি। তাই...
প্রশ্ন : অর্থাৎ আপনারা শেষ টেস্টকে আলাদা করে গুরুত্ব না দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাকে এক করে নিয়েছেন?
আকরাম : ঠিক তাই। কারণটা তো আগেই বললাম। টেস্টের পর ছয়টি আন্তর্জাতিক ইনিংসে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা আশরাফুলকে বাদ দিয়েছি। তবে ভবিষ্যতে ওর ফিরে আসার সুযোগ সব সময়ই থাকছে। আর জিম্বাবুয়েতে তো নাফীসও ভালো খেলেছে। এ কারণেই তিন নম্বরে ওর ওপর আস্থা রাখলাম।
প্রশ্ন : আশরাফুলকে কি অন্য কোনো পজিশনের জন্য বিবেচনা করা যেত না?
আকরাম : সুযোগ কোথায়, বলেন? চার নম্বরে আছে অন্যতম সেরা পারফরমার মুশফিক। পাঁচ নম্বরে সাকিব। এদের জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ছয় নম্বরের জন্য ভেবে রেখেছি নাঈমকে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি সেঞ্চুরি, আরেকটি নাইনটি করেছে ও। এসব জায়গায় আমরা তাই আশরাফুলকে ভাবিনি।
প্রশ্ন : অথচ রকিবুল হাসান কিংবা শুভাগত হোমকে স্কোয়াডে রেখেছেন...
আকরাম : সেটি তো অন্য পজিশনে। ওরা মিডল অর্ডারে ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে। অলক কাপালির জায়গাটা ওরা নিয়েছে। অলক তো সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না। আর এ মুহূর্তে টেস্টের জন্য ও তৈরি বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি।
প্রশ্ন : অলক কিন্তু টেস্ট খেলেছে অনেক আগে। তাকে তৈরি মনে হলো না, ওদিকে আপনারা আস্থা রাখলেন রকিবুল হাসানের ওপর। যাঁকে কিনা আবার জিম্বাবুয়ে সফরের দলে রাখেননি। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে না?
আকরাম : অলকের ক্যারিয়ারের মাঝের সময়টার কথা আমরা সবাই জানি। আমি বলছিলাম ফিরে আসার পর ও প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারছে না। আশরাফুলের মতোই। আর রকিবুলকে নেওয়ার পেছনে দুটো ব্যাপার কাজ করেছে। মাঝে দু-তিনটি ইনিংস দেখে ওর ব্যাটিং-অ্যাপ্রোচ আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে, টেস্টের জন্য সেটি আদর্শ। দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, অলক ওই রকম পারফর্ম করতে পারেনি। অলক ভালো পারফর্ম করলে রকিবুলের ফেরার সম্ভাবনা কম ছিল।
প্রশ্ন : ব্যাপারটা তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই অনাদিকালের মতো। নিজে ভালো পারফর্ম করার চেয়ে অন্যের খারাপ ফর্মের কারণেই দলে ঢোকার সুযোগ পাওয়া...
আকরাম : ঠিক তাই। গত তিন-চার বছর নির্বাচক থাকার অভিজ্ঞতায় আমি দেখছি, এটিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় সত্য। এ ওকে জায়গা করে দিচ্ছে আবার তাকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। সুযোগ পেলে কেউ যে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করবে, তেমনটা কেউ পারছে না। যা খুব দুর্ভাগ্যজনক।
প্রশ্ন : আশরাফুলের ব্যাপারটা কি ওকে জানিয়েছেন?
আকরাম : সেটি এখনো জানাতে পারিনি। কাল তো ম্যাচ ছিল। তৃতীয় ওয়ানডে শেষে দল তৈরি করে মিডিয়ায় দিতে দিতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই অ্যাশের (আশরাফুল) সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত, ও ব্যাপারটা বুঝবে। আজ রাজের (আবদুর রাজ্জাক) সঙ্গে কথা বললাম। ও ব্যাপারটা ঠিকই বুঝেছে।
প্রশ্ন : এই আবদুর রাজ্জাককে বাদ দিয়ে ইলিয়াস সানিকে নেওয়ার কারণটা একটু বলবেন?
আকরাম : আমি এখনো মনে করি, সাকিবের সঙ্গে আমাদের সেরা স্পিনার রাজ্জাকই। কিন্তু জিম্বাবুয়ে থেকেই দেখছি, ওর ধারাবাহিকতার একটু সমস্যা হচ্ছিল। ও যদি টেস্ট স্কোয়াডে থাকতও, প্রথম ম্যাচে ওর খেলার সম্ভাবনা খুব একটা ছিল না। এ কারণেই আমাদের মনে হয়েছে, ছন্দ ফেরানোর জন্য রাজ এ সময়টা জাতীয় লিগ খেলুক। সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ আছে। ওই সময় রাজকে আমাদের লাগবে। আর সানির (মোহাম্মদ ইলিয়াস) কথা বলব, গত এক-দুই বছর ধরেই ও ভালো করছে। অধিনায়ক ও কোচের মত নিয়েই সানিকে স্কোয়াডে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, ও ভালো করবে।

No comments

Powered by Blogger.