প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি জামায়াত নেতার-আরেকটি ১৫ আগস্ট আসন্ন' by আনু মোস্তফা,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে রাজশাহী জেলা জামায়াতের এক নেতা বলেছেন, আরেকটি ১৫ আগস্ট আসন্ন। এবার আর তিনি বাঁচবেন না। বিএনপির রোডমার্চ উপলক্ষে গতকাল বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়া মোড়ে আয়োজিত পথসভায় জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ এই হুমকি দেন বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওবাইদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, 'নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদসহ জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার করে আপনি মহা ভুলই করেছেন। জামায়াত নেতাদের অবিলম্বে ছেড়ে না দিলে দেশে আরেকটি ১৫ আগস্ট আসন্ন, তা আপনি এখনো জানেন না।


'৭৫-এর ১৫ আগস্ট আপনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেননি। বরং আপনার বাবার মতো অত্যাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। শেখ মুজিবের কবরে যেমন মাটি দেওয়ার লোক পাওয়া যায়নি, তেমনি আপনার কবরেও মাটি দেওয়ার কেউ থাকবে না।'
ওবাইদুল্লাহ আরো বলেন, 'এবারে আরেকটি ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটাবে সেনাবাহিনীতে থাকা জামায়াতের হাজার হাজার সদস্য ও জামায়াত-শিবিরের মুজাহিদ ভাইয়েরা। তাঁরা এখনো আপনার কীর্তিকলাপ নীরবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী এবারে আর আপনি বাঁচতে পারবেন না। সময় থাকতে জামায়াত নেতাদের মুক্তি দিয়ে বুদ্ধিমত্তার কাজ করুন।'
দলের নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে ওবাইদুল্লাহ বলেন, 'আপনারা ধৈর্য হারাবেন না, আরেকটি ১৫ আগস্ট দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। খুব তাড়াতাড়ি জাতি জালিম শেখ হাসিনার কবল থেকে চির দিনের জন্য মুক্তি পাবে।'
ওবাইদুল্লাহর এই বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ কারণে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে একটি বড় গাড়িবহর নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে চলে যান।
গোদাগাড়ী থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত নেতার বক্তব্য আইনবিরোধী ও সরকারপ্রধানকে সরাসরি হত্যার হুমকির সামিল। তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাপারে কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
ওসি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওবাইদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
ওবাইদুল্লাহর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জামায়াতের এই নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চ শেষে অনুষ্ঠিত জনসভায় যোগ দেওয়ার পর আর গোদাগাড়ীতে ফেরেননি বলে জানা যায়। মাগরিবের পর মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওবাইদুল্লাহর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, 'জামায়াতের এই নেতার বক্তব্য জাতির পিতার প্রতি অবমাননাকর। তাঁর বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর হত্যার সরাসরি হুমকি। এই ধৃষ্টতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।'
ওবাইদুল্লাহকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, 'পুলিশ যদি মামলা না করে, তাহলে আমরাই করব।'
গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মুজমদার বলেন, 'জাতির পিতার প্রতি অবমাননা ও সরকারপ্রধানকে সরাসরি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে জামায়াত নেতার এই বক্তব্যে।'
গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জামায়াত নেতার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল বলে দাবি করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'ওবাইদুল্লাহ বলেছেন, সেনাবাহিনীতে তাঁদের হাজার হাজার সদস্য রয়েছেন এবং তাঁরাই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাবে। তাঁর এই বক্তব্য হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।' ওবাইদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে গোপন কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কি না তা খুঁজে বের করার দাবি জানান মালেক।
১৯৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে ইতিমধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আরো ছয় খুনি পলাতক রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.