দুই ম্যানচেস্টারের স্বস্তি

উরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার খেলছে ম্যানচেস্টারের দুটি ক্লাবই। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে সেটা আনন্দের উপলক্ষ না হয়ে যেন উত্তর ইংল্যান্ডের ফুটবলপাগল শহরটির ভক্তকুলের জন্য হয়েছিল বিষাদের কারণ। ৪৩ বছর পর ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টে নাম লেখানো ম্যানচেস্টার সিটি তো বটেই, সাবেক চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও যে এবারের টুর্নামেন্টের প্রথম দুটি ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি! মঙ্গলবার রাতে অবশেষে কেটেছে সেই কুফা, নিতান্তই ভাগ্যের জোরে জয় পেয়েছে দুদলই।


ওয়েইন রুনির দুটি পেনাল্টি চ্যাম্পিয়নস লিগে নবাগত ওতেলুল গালাতির বিপক্ষে জয় এনে দিয়েছে ম্যানইউকে, আর ম্যানসিটি প্রথমে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ভিলারিয়ালকে হারিয়েছে একটি আত্মঘাতী গোল আর এরপর ইনজুরি সময়ে দেওয়া সার্জিও আগুয়েরোর গোলে। অন্যদিকে ঘরোয়া লিগে অবস্থান যেমনই হোক, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ আরো একবার দেখিয়েছে তাদের ফর্মের ছাপ, 'পুরনো শত্রু' অলিম্পিক লিওঁকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছে তারা।
সপ্তাহ দুয়েক আগে পূর্ব ইউরোপ সফরে গিয়েই শুরু হয়েছিল রুনির দুঃসময়, মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে দেখেছিলেন লাল কার্ড। প্রতিবেশী রুমানিয়ার মাঠে গিয়ে সেই দুঃসময় তিনি ভুলেছেন দুটি পেনাল্টি কাজে লাগিয়ে। ৬৪ মিনিটে তাঁকেই ফাউল করায় পাওয়া পেনাল্টি থেকে তিনি প্রথম গোলটি করার পর পরই অবশ্য বিপদে পড়ে গিয়েছিল রেড ডেভিলরা, কারণ দু মিনিট পরেই অধিনায়ক নেমানিয়া ভিদিচকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি। ২০ মিনিট পর অবশ্য 'সমতা' এসেছে এ ক্ষেত্রে, কারণ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মার্চিং অর্ডার পেয়েছেন গালাতির মিলান পেরেনদিজা। আর ইনজুরি সময়ে আরেকটি পেনাল্টি পেয়ে রুনি নিশ্চিত করেছেন ম্যানইউর জয়, সে সঙ্গে ঢুকে পড়েছেন রেকর্ডবুকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি তাঁর ২৬তম গোল, সাবেক সতীর্থ পল স্কলসকে পেছনে ফেলে এখন তিনিই ইউরোপসেরা এ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল করা ইংলিশ ফুটবলার।
তৃতীয় ম্যাচে প্রথম এ জয়ে 'সি' গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছে ম্যানইউ। তিন ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৫, এ দিনের অন্য এক ম্যাচে এফসি বাসেলকে ২-০ গোলে হারানো বেনফিকা ৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে।
ম্যানসিটির জয়সূচক গোলটিও এসেছে ইনজুরি সময়েই_যখন স্বদেশি পাবলো জাবালেতা ক্রসে পা ছুঁইয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন অ্যাগুয়েরো। কিন্তু এর আগে নিজেদের মাঠে খেলতে নামা সিটিজেনদের সময়টা কেটেছে বড় কষ্টে। গোলরক্ষক জো হার্টের ব্যর্থতায় ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল তারা। জিউসেপ্পি রসির শট হার্ট ঠিকমতো গ্রিপ করতে না পারায় বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন ক্যানি। ৪৩ মিনিটে তারা সমতায় ফিরেছে কার্লোস মারচেনার আত্মঘাতী গোলে, আর তারপর ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে অ্যাগুয়েরোর ওই গোল! এ জয়ের পরও অবশ্য ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে সিটিজেনদের অবস্থান তিনে, নাপোলির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে প্রথম পয়েন্ট হারালেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বায়ার্ন মিউনিখ (৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট) আর নাপোলির সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫। দ্বিতীয় মিনিটেই টনি ক্রুজের গোলে এগিয়ে যাওয়া বায়ার্ন জয়বঞ্চিত হয়েছে ৩৯ মিনিটে হোলগার বাডস্টুবারের আত্মঘাতী গোলে, আর তার আগে একটা পেনাল্টি পেয়েও মিস করেছেন তাদের তুখোড় ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার মারিও গোমেজ।
'ডি' গ্রুপে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয় জয় এনে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান করিম বেনজেমার। নিজের পুরনো ক্লাবের বিপক্ষে তিনি নিজে একটি গোল করেছেন, আর অবদান রেখেছেন দুই জার্মান স্যামি খেদিরা ও মেসুত ওজিলের করা দুটি গোলে। ১৯ মিনিটে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্রসে পা ছুঁইয়ে রিয়ালকে এগিয়ে নিয়েছেন এ ফরাসি ফরোয়ার্ড, ৪৭ মিনিটে খেদিরা আর ৫৫ মিনিটে ওজিলের গোলদুটিও হয়েছে তাঁরই পাস থেকে। প্রথম গোলের পর থেকেই হার মেনে নেওয়া লিওঁর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন সার্জিও র‌্যামোস, ৮১ মিনিটে।
দিনের অন্য এক ম্যাচে ডায়নামো জাগরেবকে ২-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছে আয়াঙ্ আর্মস্টারডাম। লিওঁর পয়েন্টও তাদের সমান, ৪, তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে আছে ফরাসিরা।
ঘরোয়া লিগে রিয়ালের চেয়েও খারাপ অবস্থানে থাকা ইন্টার মিলানও কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের গ্রুপে আছে শীর্ষে! মঙ্গলবার নিজেদের মাঠে জিয়ামপাওলো পাজ্জিনির দেওয়া একমাত্র গোলে লিলকে হারানোর পর তিন ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট, দিনের অন্য ম্যাচে তুরস্কের ট্র্যাবজোনস্পরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছে সিএসকেএ মস্কো। ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.