মরতে রাজি ব্লগার সানাদ

মিসরের কারাবন্দি ব্লগার মাইকেল নাবিল সানাদ বলেছেন, তিনি মরতে প্রস্তুত। সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে আত্মহত্যা করাই শ্রেয়।কারাগারে ৫৭ দিন ধরে অনশনরত সানাদ গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। 'মিসরীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করার' অভিযোগে মাইকেল নাবিল সানাদকে (২৬) গত মার্চে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন মিসরের একটি সামরিক আদালত। 'জনগণ এবং সেনাবাহিনী কখনোই একপাশে থাকতে পারে না' শিরোনামে নিজের ব্লগে একটি লেখা দিয়েছিলেন সানাদ। তাঁর ওই লেখা থেকে সামরিক শাসকদের বিরোধী একটি আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে।


গণ-অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতনের পর সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদ ক্ষমতায় আসে।সানাদকে দণ্ড দেওয়ার কারণে সামরিক বিচারবিরোধী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মিসরের সবখানে। মুবারকের পতনের পর থেকে ১২ হাজারেরও বেশি লোককে সামরিক আদালতে তোলা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টিকে ন্যায়বিচারের পতন বলে অভিহিত করে। কারাগারের ভেতরেই সামরিক শাসকদের বিরোধিতায় অনশন শুরু করেন সানাদ।
গতকাল বিবৃতিতে সানাদ বলেন, 'সামরিক কর্তৃপক্ষ যদি ভেবে থাকে যে আমি অনশনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, তাহলে তাদের কল্পনাবিলাসীই বলতে হবে। একদল নাৎসি আমার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে_এটা দেখার চেয়ে আত্মহত্যা করাই আমার জন্য বেশি সম্মানজনক হবে।'
গণ-আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে বেসামরিক আদালতে সানাদের বিচারের নির্দেশ দেন মিসরের একটি আপিল আদালত। কিন্তু বেসামরিক আদালতকে সামরিক ট্রাইব্যুনালের আরেকটি রূপ বলে অভিহিত করে জনতা। সানাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর পক্ষের আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই গত বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনী বিচার শুরু করে। বিচারের বিষয়টিকে 'নাটক' বলে উল্লেখ করেন সানাদের ভাই মার্ক।
এ ধরনের বিচারবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ও ক্যান্সার গবেষক মোনা সেইফ বলেন, 'সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন বন্ধ করতে সামরিক আদালতকেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সানাদের ঘটনাটি এরই নমুনা। এর মাধ্যমে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।'
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, 'মাইকেল নাবিল সানাদের বিচার ভুলে ভরা এবং এতে অযথা বিলম্ব ঘটানো হচ্ছে। তাঁকে আবারও বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্তটি তাঁর জীবন নিয়ে খেলার মতোই একটি ঘটনা। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো উঠিয়ে নেওয়া উচিত এবং অবিলম্বে শর্তহীনভাবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।'
সানাদের সমর্থনে গড়ে ওঠা আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছে তাঁর আগের ইসরায়েলপন্থী মনোভাবের কারণে। এর পরও সামরিক কর্মকর্তারা তাঁর পক্ষ সমর্থন থেকে জনগণকে ফেরাতে পারছে না। নিজের সর্বশেষ ব্লগে সানাদ লেখেন, 'একদল হত্যাকারী ও দেশি চোরের কাছে স্বাধীনতা ভিক্ষা চাইব না আমি। সামরিক পরিষদকে আমার আটকাবস্থার জন্য, আমার ওপর নির্যাতন, আমার মুখ বন্ধ করে রাখা, আমি ও আমার আত্মীয়-বন্ধুদের ওপর গোয়েন্দাগিরির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। হত্যা, নির্যাতন ও অন্যায় বিচারের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে তাদের।' সূত্র : গার্ডিয়ান।

No comments

Powered by Blogger.