সবিশেষ-একচোখা হাঙর

গ্রিক পুরাণের একচোখা সাইক্লোপসের কথা হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু একচোখা হাঙর কি কেউ দেখেছেন কখনো? প্রশ্নটা বাংলাদেশের আমজনতার কাছে খানিকটা অবান্তরই ঠেকবে হয়তো। দেশের এক কোনায় একটি মাত্র উপসাগর থাকায় এই ব-দ্বীপের সিংহভাগ মানুষের তো সাগর দেখারই সুযোগ হয়নি। আর বঙ্গোপসাগরেই যেহেতু হাঙর নামের প্রাণীটি ডলফিন, তিমির মতোই বিরল, সেখানে এক চোখের হাঙরের প্রসঙ্গ টেনে কি লাভ? তবু প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বকে ঘরে বসেই দেখার সুবিধা থাকায় তথ্যটা জেনে নিলে ক্ষতি কি?


পৃথিবীর বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরে নানা আকারের ও বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য হাঙরের দেখা মেলে। মোটামুটি নিরীহ থেকে শুরু করে রাক্ষস প্রজাতির হাঙর আছে সাগরগুলোয়। রক্তলোভী বিশাল আকৃতির কিছু হাঙর আছে যারা সাগরে নামা আহত মানুষ ও প্রাণীদের করাতের মতো চোয়াল দিয়ে কেটে নিমিষে সাবাড় করে দেয়। এমনকি মাঝ সাগরে মাছধরা ট্রলার, যাত্রীবাহী জাহাজ পর্যন্ত উল্টে দিয়ে জেলে ও নাবিকদের গিলে ফেলার প্রচুর ঘটনাও শোনা যায়। এসব হাঙরের ধারালো ব্লেডের মতো চোয়াল ও দাঁতের সংখ্যার
রকমফের হয়। গড়ন, রং, ওজন ও আচরণের তারতম্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে শনাক্তও করা হয়। কিন্তু আকৃতি যাই থাকুক না কেন হাঙরের চোখ দুটিই। এ কারণেই একচোখা হাঙরের গল্প বিশ্বজুড়েই কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা।
অতীতে কল্পনাপ্রবণ মানুষ ছবি এঁকে বা কমিক-কার্টুনের চরিত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক চোখের হাঙরের চেহারা ছবি দেখিয়েছিল বটে, কিন্তু তাঁর কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল না। সম্প্রতি সেই অবাস্তব চেহারাটাও প্রত্যক্ষ করল মানুষ।
গত গ্রীষ্মে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের তীরবর্তী ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল একদল জেলে। সমুদ্র শিকারিদের উদ্দেশ্য ছিল হাঙর শিকার। সফলও হন তাঁরা। এ রকম একটা সন্তানসম্ভবা হাঙর শিকার করার পর সেটির পেট কাটতেই বেরিয়ে আসে প্রায় পরিণত একটি হাঙর শাবক। হয়তো আর কিছুদিন পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নিত সে। কিন্তু এর আগেই তার মা ধরা পড়ায় জীবিত অবস্থায় পৃথিবীর সাগর দাপিয়ে বেড়ানো সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। কিন্তু এই হাঙর শাবকটি তাজ্জব বানিয়ে ছাড়ে সবাইকে, কারণ এটির ছিল মাত্র একটি চোখ। আরো আশ্চর্যের বিষয়, সেই চোখটার অবস্থান তার মুখের ঠিক মাঝখানে, যেন অবিকল গ্রিক পুরাণের সেই সাইক্লোপস।
গত জুলাইয়ে হাঙরটির ছবি প্রথম ছাপা হলে অতীতের মতোই সবাই এটির অস্তিত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। সবাই ধারণা করে এটি নিশ্চয় কম্পিউটারের ফটোশপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বানানো ছবি।
কিন্তু এটিকে ধরেছিলেন যিনি, সেই জেলে হাঙর ছানাটি সংরক্ষণ করেন। হাঙর গবেষকরা পরে সেটিকে নিয়ে যান এবং তারা নিশ্চিত হন, এ পর্যন্ত পৃথিবীর সাগরে দেখা পাওয়া এটিই প্রথম একচোখা হাঙর। মেঙ্েিকার হাঙর গবেষণা কেন্দ্র 'সেন্ট্রো ইন্টারডিসিপ্লিনারিও ডি সিয়েনসিয়াস ডেল মার'-এর গবেষক গ্যালভান ম্যাগানা এটিকে নিরীক্ষণ করে নিশ্চিত হয়েছেন, মা হাঙরটি ধরা না পড়লে জীবিত অবস্থাতেই একচোখা হাঙর ছানাটির জন্ম হতো। তিনি জানান, হাঙরের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত জানা ৫০টি অস্বাভাবিক জন্মের ঘটনার মধ্যে এটি অন্যতম।' তিনি নিশ্চিত করেছেন, এই হাঙরটি কোনো বিশেষ প্রজাতিতে পড়ত না, এটি নিশ্চিতভাবেই জন্মগত বিকৃতি, তবে হাঙরের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কদাচিৎ। তিনি জানান, ২০০৫ সালেও এরকম একটি হাঙর ছানা ধরা পড়ার গুজব অনলাইনে শোনা গিয়েছিল, সেটির নাকি নাকও ছিল না। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে ঘটনাটি সে সময় প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। সূত্র : ডেইলিমেইল অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.