পরিকল্পনামন্ত্রী বললেন : অর্থায়ন নিয়ে চিঠি চালাচালিতে লাভ নেই দাতাদের সঙ্গে আলোচনা জরুরি

রিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার (বীরউত্তম) বলেন, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিলে শুধু চিঠি চালাচালি করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দাতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। গতকাল রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আয়োজিত বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দাতাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রতিনিধিদের আরও মতবিনিময় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।


সাম্প্রতিককালে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বৈদেশিক ঋণের ছাড় আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় সচিব ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে দাতাদের এ বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর বৈদেশিক সহায়তা ছাড় কমে যাওয়ায় বৈঠকে সচিবরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা এজন্য দাতাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে তারা বলেন, স্থানীয় মিশনগুলোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকার কারণে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেই অর্থ খরচ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেন, বৈদেশিক খাতে অর্থ ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট দাতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তা সমাধান করতে হবে। এতে শুধু চিঠি চালাচালি করেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যখন কোনো সমস্যা হবে তখন সংশ্লিষ্ট দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। দাতা দেশগুলো এ ব্যাপারে আন্তরিক রয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, আমরা বৈদেশিক সাহায্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই। প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রকল্পে সমস্যা রয়েছে।
আবার এক প্রকল্পের সমস্যা অন্যটা থেকে আলাদা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জনবল নিয়োগ, ক্রয় প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রোফর্মা (ডিপিপি) তৈরিতে বিলম্ব কমাতে বলা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে প্রতি ৬ মাস অন্তর প্রকল্পের অগ্রগতি মনিটরিংয়ের সুপারিশ করন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি। বেশি পিছিয়ে পড়া প্রকল্পের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দাতা সংস্থার সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় মনিটরিংয়ের প্রস্তাব জানায় বিশ্বব্যাংক।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ২৪ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ১৪২ কোটি ৮০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ হিসেবে তিন মাসে প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৭ শতাংশ অর্থ ছাড় দিয়েছে দাতারা।
দাতারা অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেয়ায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অর্থসঙ্কটের কারণে সরকার এসব প্রকল্প চালিয়ে নিতে পারছে না। সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় উত্পাদন কমে গিয়ে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

No comments

Powered by Blogger.